বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য, সমস্যা ও সমাধান

0
ফেইসবুকে আমাদের সকল আপডেট পেতে Follow বাটনে ক্লিক করুন।




বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনীতির বৈশিষ্ট্যসমূহ, এবং এর সমস্যাবলি ও সমস্যা সমাধানের উপায়সমূহ


বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য, সমস্যা ও সমাধান


বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনীতির বৈশিষ্ট্যসমূহ 


১. বৈদেশিক ঋণ : 

বাংলাদেশ বিদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে ঋণ গ্রহণ করেছে। উন্নয়ন কর্মসূচির অর্থায়ন ও বৈদেশিক লেনদেনের ঘাটতি পূরণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ নিয়মিতভাবে বিদেশ থেকে ঋণ গ্রহণ করে।

২. মিশ্র অর্থনীতি : 

বাংলাদেশে বর্তমানে মিশ্র অর্থনীতি প্রচলিত রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি খাত পাশাপাশি কাজ করে যাচ্ছে। 

তবে বর্তমানে বেসরকারি খাতের উপর অধিকতর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে এবং দেশ ক্রমশ মুক্তবাজার অর্থনীতির পথে অগ্রসর হচ্ছে।

(Keyword: বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনীতি)

৩. প্রাকৃতিক সম্পদের অপূর্ণ ব্যবহার : 

বাংলায় প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য থাকলেও তাদের যথাযথ ব্যবহার এখনো সম্ভবপর হয় নি। মূলধন, দক্ষ জনশক্তি ও কারিগরি জ্ঞানের অভাব আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদসমূহের পরিপূর্ণ ব্যবহারের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

৪. শিল্পে অনগ্রসরতা : 

বাংলাদেশের শিল্পোন্নতির হার অত্যন্ত মন্থর। দীর্ঘদিনের ঔপনিবেশিক শাসন ও পাকিস্তান সরকারের অবহেলার জন্য বাংলাদেশ শিল্পে অনুন্নত রয়ে গেছে। বর্তমানে আমাদের জাতীয় উৎপাদনে শিল্পের অবদান শতকরা ৩০.৩৩ ভাগ মাত্র।

৫. কৃষির উপর নির্ভরশীলতা : 

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো মূলত কৃষিনির্ভর। এদেশের প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। আমাদের জাতীয় আয়ের প্রায় ২০.১৬ শতাংশ কৃষি থেকে পাওয়া যায়। 

কিন্তু বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান হলেও এখানে জমির একর প্রতি ফলন অত্যন্ত কম। ফলে প্রতি বছর দেশে খাদ্য ঘাটতি দেখা যায় ।

৬. সস্তা শ্রম : 

বাংলাদেশে শ্রম উৎপাদনের সবচেয়ে সস্তা উপকরণ। তাই এদেশে শ্রম প্রগাঢ় শিল্প স্থাপন করা অধিকতর সুবিধাজনক।

৭. অনুন্নত আর্থসামাজিক কাঠামো: 

বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ উৎপাদন, শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং বিনোদন ইত্যাদি অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামো এখনো অনুন্নত।

৮. অনুন্নত কৃষি ব্যবস্থা : 

বাংলাদেশে এখনো মান্ধাতার আমলের চাষাবাদ পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। আধুনিক বৈজ্ঞানিক যুগেও আমাদের দেশের কৃষকেরা লাঙল-জোয়ালের সাহায্যে চাষাবাদ করে, রাসায়নিক সারের সঙ্গে অধিকাংশ কৃষকের পরিচয়ই নেই।

(Keyword: বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনীতি)

৯. জনসংখ্যার চাপ : 

দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি আমাদের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। ২০০৯-২০১০ সালের প্রাক্কলিত হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৯৯০ জন লোক বাস করে এবং জনসংখ্যা শতকরা ১.৩২ ভাগ বৃদ্ধি পাচ্ছে । 

১০. স্বল্প মাথাপিছু আয় : 

মাথাপিছু স্বল্প আয় বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল বৈশিষ্ট্য। আমাদের দেশের জনসাধারণ কৃষির উপর নির্ভরশীল। 

কিন্তু কৃষিক্ষেত্রে এখনো পর্যন্ত চিরাচরিত চাষাবাদ পদ্ধতি বজায় থাকায় এবং জমির উপর জনসংখ্যার অত্যধিক চাপ পড়ায় বাংলাদেশের কৃষকদের উৎপাদন ক্ষমতা কম ।

১১. সামাজিক ও ধর্মীয় পরিবেশ : 

আধুনিক শিক্ষার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মন হতে বর্তমানে অন্ধবিশ্বাস ও পুরাতন কুসংস্কার বহুলাংশে বিদূরিত হয়েছে। ফলে আমাদের সামাজিক পরিবেশ এখন আর অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে তেমন কোন বাধা নয়। 

সুতরাং ধর্ম সম্বন্ধে মোল্লা-পুরোহিত ভুল ব্যাখ্যা দেশের অশিক্ষিত মানুষকে মাঝেমধ্যে বিভ্রান্ত করলেও এদেশের ধর্মীয় পরিবেশ সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতিকূল নয় ।

১২. বৈদেশিক বাণিজ্যের উপর নির্ভরশীলতা : 

বাংলাদেশের অর্থনীতি বৈদেশিক বাণিজ্যের উপর নির্ভরশীল। আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য গুটি কয়েক কৃষি ও শিল্পজাত পণ্য নিয়ে গঠিত। কিন্তু রপ্তানির তুলনায় আমাদের আমদানির পরিমাণ অনেক বেশি।

১৩. পুষ্টিহীনতা : 

দেশে খাদ্যে যোগান পর্যাপ্ত না হওয়ায় বাংলাদেশের জনসাধারণ পুষ্টিহীনতার শিকার হয়ে পড়ছে। আমাদের দেশে পনেরো বছরের কম বয়সের কিশোর-কিশোরীদের শতকরা ৮০ ভাগ, 

জীবনের কোন না কোন সময় পুষ্টিহীনতায় ভোগে। এদেশে পুষ্টিহীনতার কারণে ১০ হাজার শিশু অন্ধত্ব বরণ করে।

১৪. মূলধনের স্বল্পতা : 

বাংলাদেশের দারিদ্র্যক্লিষ্ট জনসাধারণের মাথাপিছু আয় কম বলে এদেশে মূলধন সৃষ্টির হার অত্যন্ত কম। মূলধনের অভাবে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ও জনশক্তিকে কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে না ।

১৫. ব্যাপক নিরক্ষরতা : 

বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। এখনো বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৪০ ভাগ নিরক্ষর। ব্যাপক নিরক্ষরতা সামাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে অন্তরায়ের সৃষ্টি করেছে।

১৬. কারিগরি জ্ঞানের অভাব : 

স্বল্প আয়, জীবনযাত্রার নিম্নমান ও দেশে কারিগরি শিক্ষাকেন্দ্রের অভাবে বাংলাদেশের শ্রমিকদের কারিগরি জ্ঞান অত্যন্ত কম। কুশলী শ্রমিকের অভাব আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

১৭. খাদ্য সমস্যা : 

আমাদের দেশে জনসংখ্যা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সেই অনুপাতে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে না। 

ফলে আমরা এখনো খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারি নি। তবে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

১৮. বেকার সমস্যা : 

বাংলাদেশ বেকার সমস্যায় জর্জরিত। ব্রিটিশ আমলে এদেশে কোন উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে নি। স্বাধীন বাংলাদেশের শিল্পোন্নয়নের গতি অত্যন্ত মন্থর। ফলে বেকার সমস্যা এদেশে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

(Keyword: বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনীতি)

বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যাবলি


ভূমিকা : 

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। সুতরাং উন্নয়নশীল দেশের সকল সমস্যাই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কমবেশি বিদ্যমান রয়েছে। নিম্নে বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যাবলি আলোচনা করা হলো :

১. শিল্পের সমস্যা : 

ব্রিটিশ আমলে এদেশে শিল্পোন্নতি হয় নি। পাকিস্তান আমলেও এখানে শিল্পোন্নয়নের গতি ছিল অত্যন্ত মন্থর। স্বাধীনতার পরও আমাদের অবস্থার তেমন উন্নতি হয় নি। দেশে তেমনভাবে নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠে নি।

২. অনুন্নত অর্থনৈতিক কাঠামো : 

আমাদের দেশে সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো খুবই দুর্বল। বাংলাদেশের যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা এখনো উন্নত হয় নি। এটি আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতির পথে প্রবল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

৩. জনসংখ্যার বিস্ফোরণ : 

বাংলাদেশে জনসংখ্যা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০০৯-২০১০ সালে প্রাক্কলিত হিসাব অনুযায়ী দেশে বর্তমান বছরে শতকরা ১.৩২ ভাগ হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

জনসংখ্যা বৃদ্ধির এ হার অব্যাহত থাকলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সকল প্রচেষ্টাই বানচাল হয়ে যাবে।

৪. মুদ্রাস্ফীতির চাপ : 

ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির চাপ বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক সমস্যা। দেশের কৃষি ও শিল্প উৎপাদন কাঙ্ক্ষিত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে না। 

অন্যদিকে, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে উন্নয়ন বাজেটের অর্থায়ন করা হচ্ছে। সরকারের রাজস্ব ব্যয়ও প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

(Keyword: বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনীতি)

৫. শিক্ষার অভাব : 

শিক্ষা অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাবিকাঠি। কিন্তু দেশের জনগণের অধিকাংশই অশিক্ষিত। এদেশে ১৫ বছর বয়সের ঊর্ধ্বে শিক্ষার হার শতকরা ৫৪ ভাগ মাত্র। শিক্ষার অভাব আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম অন্তরায়। 

৬. প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার: 

বাংলাদেশে প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ নয়। অবশ্য যা কিছু আছে তাও মূলধন, কুশলী, শ্রমিক ও সংগঠনের অভাবে ঠিকমতো কাজে লাগান যাচ্ছে না। এতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। 

৭. বেকার সমস্যা : 

জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে কর্মপ্রার্থী শ্রমিকের সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে কর্মসংস্থান না বাড়ায় আমাদের দেশে বেকার সমস্যার তীব্রতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।

৮. সংগঠকের অভাব : 

আমাদের দেশে পুঁজি বিনিয়োগ করে ঝুঁকি বহন করার মতো সংগঠকের একান্ত অভাব রয়েছে। ব্যবসায় অভিজ্ঞতা না থাকায় তারা পুঁজি বিনিয়োগের ঝুঁকি গ্রহণ করতে চায় না। এটি আমাদের শিল্প বিকাশের পথে প্রধান অন্তরায়।

৯. খাদ্য ঘাটতি : 

কৃষিপ্রধান দেশ বাংলাদেশ এখনো খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে নি। ফলে প্রতি বছর আমাদেরকে খাদ্যশস্য আমদানি করতে হয়। 

এখনো আমাদের দেশে প্রতি বছর গড়পড়তায় প্রায় ২৫ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি থাকে। তবে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার জন্য দেশে ব্যাপক উদ্যোগ চলছে।

(Keyword: বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনীতি)

১০. কৃষি সমস্যা : 

বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর। এদেশের শতকরা প্রায় ৪৯ শতাংশ মানুষ কৃষিকাজ করে জীবিকানির্বাহ করে। কিন্তু আমাদের কৃষি ব্যবস্থা খুবই অনুন্নত। এদেশে এখনো সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হয়। 

১১. প্রতিকূল বৈদেশিক বাণিজ্য : 

বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন। রপ্তানি বাণিজ্যে আমরা গুটি কয়েক কৃষি ও শিল্পজাত পণ্যের উপর নির্ভর করি। কিন্তু রপ্তানির তুলনায় আমাদের আমদানির পরিমাণ অনেক বেশি।

১২. কুশলী শ্রমিকের অভাব : 

আমাদের দেশে শিক্ষিত প্রশিক্ষণের অভাবে কর্মকুশলতা অত্যন্ত নিম্নমানের। ফলে প্রচুর শ্রমিক থাকা সত্ত্বেও আমাদেরকে বিদেশ থেকে দক্ষ শ্রমিক আমদানি করতে হয়। এতে আমাদের উন্নয়ন প্রচেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে। 

১৩. মূলধনের অভাব : 

বাংলাদেশে মূলধন গঠনের হার খুবই কম। ফলে মূলধনের অভাবে আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করা দুরূহ হয়ে পড়েছে এবং বৈদেশিক ঋণের উপর নির্ভরশীলতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

১৪. সম্পদের অসম বণ্টন : 

বাংলাদেশের আয় ও সম্পদের বণ্টন সুষম নয়। এদেশে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমাজের ধনী ক্রমশ আরো ধনী ও দরিদ্র ক্রমশ আরো দরিদ্র হচ্ছে। 

১৫. স্বল্প মাথাপিছু আয় : 

বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় মাত্র ৭৫০ মার্কিন ডলার। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার জনগণের মাথাপিছু আয় আমাদের তুলনায় অনেক বেশি। 

জনগণের মাথাপিছু আয় কম বলে আমাদের সঞ্চয়ের হারও খুবই কম। এতে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ব্যাহত হচ্ছে। 

(Keyword: বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনীতি)


বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের উপায়


১. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ : 

দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি আমাদের অন্যতম প্রধান সমস্যা। জাতি হিসেবে আমাদেরকে টিকে থাকতে হলে পরিবার পরিকল্পনার সুষ্ঠু বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অবশ্যই কমাতে হবে ।

২. বৈদেশিক সাহায্যের উপযুক্ত ব্যবহার : 

বাংলাদেশে বৈদেশিক সাহায্যের সুষ্ঠু ব্যবহার হয় না। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হলে আমাদেরকে প্রাপ্ত বৈদেশিক সাহায্যের সদ্ব্যবহার করতে হবে। 

৩. শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ : 

শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ছাড়া আমাদের অর্থনৈতিক সমস্যাসমূহের সমাধান সম্ভব নয়। এ উদ্দেশ্যে সাধারণ শিক্ষার ব্যাপক প্রসারসহ, 

দেশের সর্বত্র কারিগরি শিক্ষার জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, পলিটেকনিক ও অন্যান্য কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা উচিত। 

৪. পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি : 

অর্থনৈতিক উন্নতি দেশের পরিবহন ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল। সুতরাং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হলে পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি বিধান করতে হবে। 

২০০৯-২০১০ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে পরিবহন খাতে প্রকল্প বিনিয়োগে মোট ২,৩০৯.৬৭ কোটি টাকা।

(Keyword: বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনীতি)

৫. বন্যা নিয়ন্ত্রণ : 

বন্যা আমাদের বর্তমান দুরবস্থার অন্যতম প্রধান কারণ। সুতরাং সর্বনাশা বন্যার করাল গ্রাস থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

৬. বেকার সমস্যার সমাধান : 

দেশের বেকার সমস্যা দূরীকরণের উদ্দেশ্যে গ্রামাঞ্চলে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটাতে হবে। তাছাড়া জাতীয় বাজেটে রাজস্ব খাতে ব্যয় হ্রাস করে আমাদেরকে উন্নয়ন খাতে আরো অধিক অর্থ বরাদ্দ করা উচিত।

৭. বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন : 

শিল্পোন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমাদেরকে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। সুতরাং রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি করে আমাদেরকে অধিক পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে হবে। 

এ ব্যাপারে সরকারের সুষ্ঠু বাণিজ্য নীতি ও রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

৮. ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠা : 

স্বনির্ভর অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ভারী শিল্পের উন্নয়ন একান্ত অপরিহার্য। বাংলাদেশে রাষ্ট্রের নেতৃত্বে ও কর্তৃত্বে পুঁজি দ্রব্য উৎপাদনকারী ভারী শিল্পসমূহ নির্মাণ করতে হবে। 

তাছাড়া সরকারি তত্ত্বাবধানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বাঁধ ও জলাধার নির্মাণ করতে হবে। 

(Keyword: বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনীতি)

৯. শিল্পোন্নয়ন : 

জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করতে হলে দেশে শিল্পোন্নয়নের গতি বৃদ্ধি করতে হবে। বাংলাদেশ সরকার এ ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রেখেছেন। বর্তমান বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় শিল্পোন্নয়নকে অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে। 

বর্তমান সরকারের রূপকল্প অনুযায়ী ২০২১ সাল নাগাদ যে শিল্প গড়ে উঠবে তাতে জিডিপিতে শিল্পখাতে অবদান ৪০ শতাংশে এবং মোট কর্মরত শ্রমশক্তির হার ২৫ শতাংশে উন্নীত হবে ।

১০. কৃষি উন্নয়ন : 

কৃষিকে অবহেলো করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্ভব নয়। কাজেই কৃষি উন্নয়নের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। 

২০০৯-১০ অর্থবছরে কৃষিখাতে মোট বরাদ্দের পরিমাণ ৪২০০ কোটি টাকা। এছাড়াও কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা বাবদ ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে।

১১. সুষ্ঠু পরিকল্পনা : 

দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আমাদেরকে সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই পাঁচটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মেয়াদ শেষ হয়েছে। 

১২. প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার : 

আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হলে প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। দেশের কারিগরি জ্ঞানের উন্নয়ন এবং 

প্রয়োজনবোধে বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি ও কারিগরি জ্ঞান আমদানি করে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদের যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

১৩. গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন : 

বাংলাদেশ এর প্রায় ৭৭ শতাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে। সুতরাং গ্রামভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশ ঘটাতে হবে। 

(Keyword: বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনীতি)

১৪. মুদ্রাস্ফীতি রোধ : 

স্বাধীনতার পর নানা কারণে মুদ্রাস্ফীতির যে ভয়াবহ দৈত্যটি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তাকে ঠিকমতো শায়েস্তা করতে না পারলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সকল প্রচেষ্টাই বানচাল হয়ে যাবে। 

সকল ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সরকারের আর্থিক ও রাজস্ব নীতির সুষ্ঠু প্রয়োগের মাধ্যমে বর্তমানে বিরাজমান মুদ্রাস্ফীতিকে অবশ্যই দমন করতে হবে। 

শেষ কথা : 

পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উপর্যুক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ বিদ্যমান। কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য অনুন্নত দেশের হলেও সম্ভাবনাময় জনশক্তি, কাঁচামাল, খনিজ পদার্থ, গ্যাস ইত্যাদি কাজে লাগিয়ে,

আমরা উন্নত না হোক তার কাছাকাছি পৌঁছতে পারবো। সার্বিক আলোচনা থেকে বলা যায় যে, উপযুক্ত সমস্যাগুলো বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যা। 

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে হলে আমাদেরকে এ সমস্যাগুলো দূর করতে হবে। উপর্যুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে আমরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান করতে পারি। 

উক্ত সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারলে বাংলাদেশ অর্থনীতির উন্নত চূড়ায় আরোহণ করবে।


(Keyword: বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনীতি), (Keyword: বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনীতি), (Keyword: বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনীতি), (Keyword: বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনীতি), (Keyword: বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনীতি), (Keyword: বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনীতি), (Keyword: বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনীতি), (Keyword: বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনীতি),


Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)