প্রশ্ন ॥ গান্ধীর জনপ্রিয়তার কারণসমূহ বিশ্লেষণ কর। অথবা, মহাত্মা গান্ধীর জনপ্রিয়তার কারণসমূহ আলোচনা কর। অথবা, মহাত্মা গান্ধীর কেন জনপ্রিয়তা ছিল? তার কারণসমূহ উল্লেখ কর। Reasons for Mahatma Gandhi's Popularity

উত্তর : ভূমিকা : মহাত্মা গান্ধী সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে গোটা জাতি আজও তাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। তিনি ছিলেন ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রাণপুরুষ। তারই নেতৃত্বে ভারতবাসী দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে। আমৃত্যু তিনি ছিলেন জাতির দিকনির্দেশক এবং কংগ্রেসের অবিসংবাদিত নেতা। আপামর জনসাধারণের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল প্রশংসিত।
মহাত্মা গান্ধী সম্পর্কে আরো জানতে এই পোষ্টটি পড়ুন: মহাত্মা গান্ধীর অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলন
গান্ধীজীর জনপ্রিয়তার কারণসমূহ :
ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে গান্ধীজীর জনপ্রিয়তার কারণসমূহ নিম্নে আলোচনা হলোঃ
১. গান্ধীজি ব্যক্তিত্বের প্রভাব : গান্ধীজী অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, চারিত্রিক মাধুর্য ও বিবিধ প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তার বাস্তব বুদ্ধি, পরিণামদর্শিতা, ক্ষুরধার জ্ঞান ও নৈতিক বল ছিল অসাধারণ। ব্রিটিশ শাসকরাও তার রাজনৈতিক কৌশল ও দূরদর্শিতার সাথে পাল্লা দিতে পারে নি। তার ব্যক্তিত্বের ছটা, তার মাধুর্য, স্মিত হাসি, ভাবগর্ভ বাক্যের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ত। ব্যক্তিত্বের জাদুর বলেই তিনি ভারতের সকল স্তরের জনগণের আস্থাভাজন শ্রেষ্ঠ মানবে পরিণত হয়।
২. গান্ধীজীর সত্যনিষ্ঠতা : তিনি ছিলেন গভীরভাবে মানবতাবাদী, উদারপন্থি, সহিষ্ণু ও সত্যনিষ্ঠ। সত্যের ভিত্তিতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করাই ছিল তার জীবনের ব্রত। কোনো প্রকার পার্থিব লোভ লালসা কিংবা ক্ষমতার লোভ তাকে কখনো বিপদগামী করতে পারে নি।
৩. গান্ধীজীর আদর্শবাদ : তিনি ছিলেন সাধারণ রাজনীতিকদের অপেক্ষা অনেক ঊর্ধ্বলোকে মানুষ, যার মতো ব্যক্তিত্ব রাজনীতিতে বিরল । সকল বিষয়ে তার চিন্তা ছিল মৌলিক ও ঋজু। তার জীবনে তত্ত্ব ও কর্মের বিরল সমন্বয় দেখা যায় ।
৪. গান্ধীজীর অসাম্প্রদায়িক নীতি : গান্ধীজী ছিলেন সকল প্রকার ধর্মীয় গোঁড়ামি ও সংস্কারমুক্ত মানুষ। ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা, সংকীর্ণতা এগুলো কখনো তাকে স্পর্শ করতে পারে না। তিনি ছিলেন হরিজন ও মুসলিমদের পরম বন্ধু এবং সাম্প্রদায়িকবাদী হিন্দু মুসলিমদের পরম শত্রু।
৫. অহিংস নীতি : গান্ধীজী অহিংস নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। ন্যায় ও সত্যের জন্য তিনি প্রাণত্যাগেও প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু হিংসার পথে তিনি কখনো সমস্যার সমাধান চাননি। হিংসা সন্ত্রাস ও মিথ্যার পথে তিনি স্বাধীনতা চাননি। রিপু ও লোভের উপর কর্তৃত্ব স্থাপন করে ন্যায় ও সত্যের প্রতিষ্ঠাই ছিল তার কাছে প্রকৃত স্বরাজ। গান্ধীজীর এ মহান নীতির ফলে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করতে সক্ষম হন।
৬. গান্ধীজীর আন্দোলন কৌশল : তিনি বিভিন্ন অঞ্চলের ভাষা, ধর্ম, জাতি ও ধর্মগত বৈষম্যের ব্যবধান ঘুরিয়ে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ঐক্য ও সংহতি স্থাপন করেন। সমাজের নিষ্পেষিত জনগণের আন্দোলনের মূল স্রোতধারায় সাথে সংযুক্ত করেন। তাই গান্ধীজি ভারতে সকল শ্রেণি ও সম্প্রদায়ের লোকদের ব্যাপক সমর্থন লাভ করতে সক্ষম হন।
৭. গান্ধীজীর দক্ষিণ আফ্রিকায় সত্যাগ্রহ নীতির সফলতা : দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্রর শ্রেতাব্দ বর্ণবৈষম্য নীতির বিরুদ্ধে ভারতবাসীর পক্ষ নিয়ে গান্ধীজী যে সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেন তা তাকে বিরল মর্যাদা এনে দেয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় সকল ভারতীয়দের পক্ষ নিয়ে তিনি সত্যাগ্রহ আন্দোলন ছিল। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে কাজ করার ফলে গান্ধীজী সর্বভারতীয় নেতা হিসেব স্বীকৃতি লাভ করেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় তিনি যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন ভারতে আসার পর তার সে অভিজ্ঞতা কার্যকর হয়।
৮. চম্পারণ খেদাও আহমেদবাদে সফলতা : গান্ধীজীর জনপ্রিয়তার অপর কারণ হলো ভারতে আসার পর চম্পারণ খেদাও আহমেদবাদে সত্যাগ্রহ তার সফল পরীক্ষা। এ তিনটি আন্দোলনের সাফল্য গান্ধীজীর খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা এনে দেয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, গান্ধীজী ছিলেন জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ভারতবাসীর অবিসংবাদিত নেতা। অদ্যাবধি ভারতের অপর কোনো নেতা মত এত জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেননি। ভবিষ্যতে পারবে কিনা সন্দেহ। ১৯১৯ সাল থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি ছিলেন জাতির প্রধান নিয়ামক শক্তি। তার নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় আন্দোলন এবং সর্বাত্মক আন্দোলন এবং সর্বাত্মক গণসংগ্রামে পরিণত হলো এবং সমগ্র দেশে আত্মত্যাগ ও আত্মবিশ্বাসের মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল। সর্বোপর, গান্ধীজি শুধু মাত্র একজন জনপ্রিয় রাজনীতিবাদ ছিলেন না, তিনি ছিলেন সত্য ও অহিংসার পূজারি এক মহান মানবতাবাদী।
মহাত্মা গান্ধীর জনপ্রিয়তার কারণসমূহ , মহাত্মা গান্ধীর জনপ্রিয়তার কারণসমূহ , মহাত্মা গান্ধীর জনপ্রিয়তার কারণসমূহ মহাত্মা গান্ধীর জনপ্রিয়তার কারণসমূহ