
উন্নয়নশীল দেশের বৈশিষ্ট্য কি কি? উন্নয়নশীল দেশের বৈশিষ্ট্য লিখ। অথবা, উন্নয়নশীল দেশের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে লিখ।
ভূমিকা : উন্নয়নশীল দেশ বলতে সেসব দেশকে বোঝায় যেসব দেশে কিছুটা অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিক হয়েছে এবং ক্রমশ উন্নয়নের পথে ধাবিত হচ্ছে। অনুন্নত দেশের অর্থনীতি স্থবির হলেও উন্নয়শীল দেশ বলতে একটি গতিশীল অর্থনীতি বোঝায়।
উন্নয়নশীল দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় ও জীবনযাত্রার মান উন্নত দেশের তুলনায় কম হলেও একটি গতিশীল অবস্থার মতো বিরাজমান। ফলে দেশের অর্থনীতি ক্রমশ বিকাশমান ।
উন্নয়নশীল দেশের বৈশিষ্ট্যসমূহ:
উন্নয়নশীল দেশের যেসব বৈশিষ্ট্য রয়েছে তা নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
১. মূলধনের স্বল্পতা :
মূলধনের অভাব উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়নের সবচেয়ে বড় বাধা। জনগণের আয় কম হলে সঞ্চয় কম হয় এবং যেহেতু সঞ্চয় হতে মূলধন উদ্ভূত হয় সেজন্য মূলধন গঠনও কম হয়।
ফলে বিনিয়োগের পরিমাণও কম হয়। উন্নয়নশীল দেশের দ্রুত উন্নয়নের জন্য মোট জাতীয় আয়ের ২০% বিনিয়োগ করা প্রয়োজন কিন্তু এসব দেশে তা নেই।
২. সম্পদের অপূর্ণ ব্যবহার :
উন্নয়নশীল দেশের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হলো দেশের সকল সম্পদের অপূর্ণ ব্যবহার। দেশের সমস্ত প্রাকৃতিক সম্পদের পূর্ণ ব্যবহার না হলে দ্রুত উন্নয়ন সম্ভব নয়। উন্নয়নশীল দেশে যথেষ্ট পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ আছে। কিন্তু প্রাকৃতিক সম্পদের পরিপূর্ণ ব্যবহার হয় না বলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি মন্থর ।
৩. শিল্পের অনগ্রসরতা ও কৃষির উপর নির্ভরশীলতা :
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শিল্পের অনগ্রসরতার দরুণ কৃষির উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা দেখা দেয় শিল্পে নিযুক্ত শ্রমিকের অনুপাত অপেক্ষাকৃত কম হলে দেশটি উন্নয়নশীল বলে বিবেচিত হবে।
৪. ছদ্মবেশী বেকারত্ব :
ছদ্মবেশী বেকারত্বের অস্তিত্ব উন্নয়নশীল দেশের একটি অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। উৎপাদনে নিযুক্ত আছে কিন্তু প্রান্তিক উৎপাদন শূন্য এরূপ ব্যক্তিকে ছদ্মবেশী বেকার বলা হয়। যেসব উন্নয়নশীল দেশে জনসংখ্যার সমস্যা প্রকট সেখানে এরূপ ছদ্মবেশী বেকার দেখা যায়।
৫. প্রকট ধনবৈষম্য :
উন্নয়নশীল দেশে প্রকট ধনবৈষম্য দেখা যায়। একদিকে লক্ষ লক্ষ লোক অনাহারে ও অর্ধাহারে জীবন- যাপন করে। আর অন্যদিকে মুষ্টিমেয় ধনী ব্যক্তি চরম ভোগ বিলাসের মধ্যে বাস করে।
জাতীয় আয়ের অসম বণ্টনের ফলে ধনী আরও ধনী হবার সুযোগ পায়, দরিদ্র আরও দরিদ্রে পরিণত হয় এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণি জীবন ধারণের জন্য সর্বদা সংগ্রামরত থাকে ।
৬. স্বল্প মাথাপিছু ও জীবনযাত্রার মান :
মাথাপিছু আয়ের স্বল্পতা এবং নিম্নমানের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নশীল দেশের সার্বিক লক্ষণ। মাথাপিছু আয় কম হওয়ার দরুন এসব দেশের অধিকাংশ লোক দরিদ্রভারে জর্জরিত থাকে। তাদের সঞ্চয়ের ক্ষমতা কম এবং ভোগ্যদ্রব্য ক্রয় করার পর স্বল্প আয়ের লোকদের হাতে সঞ্চয় থাকে না ।