সুলতান মাহমুদের জীবনী ও ভারতবর্ষে তার অভিযানসমূহ

সুলতান মাহমুদের জীবনী ও ভারতবর্ষে তার অভিযানসমূহ, ভারতবর্ষে সুলতান মাহমুদ গজনীর বিজয় অভিযানসহ তাঁর জীবনী আলোচনা কর, সুলতান মাহমুদের জীবনী
Follow Our Official Facebook Page For New Updates


Join our Telegram Channel!

সুলতান মাহমুদের জীবনী ও ভারতবর্ষে তার অভিযানসমূহঃ

» প্রশ্ন : ভারতবর্ষে সুলতান মাহমুদ গজনীর বিজয় অভিযানসহ তাঁর জীবনী আলোচনা কর। 

সুলতান মাহমুদের

সুলতান মাহমুদের দীর্ঘ তেত্রিশ বছরের রাজত্ব ভারত উপমহাদেশ তথা পৃথিবীর ইতিহাসে মুসলিম বিজয়ের ‘স্বর্ণোজ্জ্বল যুগ' হিসেবে পরিচিত। তিনি ১০০০ খ্রিস্টাব্দ হতে ১০২৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ২৭ বছরে ১৭ বার ভারতবর্ষে অভিযান পরিচালনা করেন এবং প্রতিবারই বিস্ময়করভাবে জয়লাভ করেন।

 তাঁর অনন্য সাধারণ সামরিক প্রতিভা তাঁকে বিশ্বের সেরা সমরনায়কদের সমমর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। তাঁর অভিযানগুলোর মাধ্যমে প্রমাণ হয়— The annexation constitutes the sole claim of Mahmud to be counted as an Indian sovereign.

সুলতান মাহমুদের জীবনী:

১. জন্ম ও বংশ পরিচয় : 

সুলতান মাহমুদ ৯৭১ খ্রিস্টাব্দে আফগানিস্তানের অন্তর্গত একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গজনীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সবুক্তগীন ছিলেন গজনীর একজন উন্নতমানের শাসক। গজনীর নিকটবর্তী পরগনা জাবুলিয়ানের আমীরের কন্যা ছিলেন তাঁর মাতা। 

তাঁর বাল্যকাল সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানা যায়নি। তবে তিনি অসি চালনায় পারদর্শী ছিলেন। তাই পিতার মৃত্যুর পর মাত্র ২৭ বছর বয়সে মাহমুদ স্বীয় ভ্রাতা ইসমাঈলকে পরাজিত করে গজনীর অধিপতি হন ।

২. শিক্ষালাভ : 

ঐতিহাসিক আর. সি. মজুমদার বলেন, পারিবারিক পরিবেশেই সুলতান মাহমুদ প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। শৈশবেই তিনি মহাগ্রন্থ আল কুরআন মুখস্থ করেন এবং তৎকালীন বড় বড় জ্ঞানতাপসদের সংস্পর্শে থেকে উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন। বাল্যকাল হতেই তিনি যুদ্ধবিদ্যা, শাসনপদ্ধতি এবং রাজনীতিবিদ্যা সম্পর্কে যথেষ্ট শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা লাভ করেন 

৩. প্রাদেশিক শাসনকর্তা : 

শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে পিতা ছেলে মাহমুদকে খোরাসান প্রদেশের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ করেন। মাহমুদ অত্যন্ত সফলতার সাথে উক্ত দায়িত্ব পালন করেন।

৪. পিতৃ বিয়োগ : 

৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে সবুক্তগীনের মৃত্যু হলে তাঁর পুত্রদের মধ্যে ক্ষমতারোহণ নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। পিতার মৃত্যুর সময় মাহমুদ গজনীতে ছিলেন না। এ সুযোগে মাহমুদের কনিষ্ঠ ও বৈমাত্রেয় ভ্রাতা ইসমাঈল গজনীর সিংহাসনে আরোহণ করেন।

৫. ক্ষমতারোহণ : 

৭ মাস বিবাদের পর ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে মাহমুদ তাকে পরাজিত ও কারারুদ্ধ করে গজনীর সিংহাসনে আরোহণ করেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ২৬ বছর। তার অসাধারণ শৌর্য-বীর্য, বীরত্ব ও তেজস্বিতার জন্য ঐতিহাসিকগণ মাহমুদকে বিশ্ববিশ্রুত আলেকজান্ডার, হানিবল, সিজার ও নেপোলিয়নের সাথে তুলনা করেছেন ।

৬. সুলতান উপাধি গ্রহণ ও খেতাব লাভ : 

সিংহাসনে আরোহণ করে মাহমুদ নিজেকে স্বাধীন নরপতি ঘোষণা করে সুলতান উপাধি গ্রহণ করেন। সিংহাসন সুরক্ষিত করার উদ্দেশে মাহমুদ বাগদাদের খলিফা আল কাদির বিল্লাহর নিকট প্রচুর উপঢৌকন পাঠিয়ে তাঁর সমর্থন লাভ করেন। 

খলিফা মাহমুদকে “ইয়ামিনুদ্ দৌলা' এবং 'আমিনুলমিল্লাত' উপাধিতে ভূষিত করেন। এ জন্য ইতিহাসে তাঁর বংশ ‘ইয়ামিনী' বংশ নামে অভিহিত হয়ে থাকে ।

৭. চরিত্র ও কৃতিত্ব : 

সুলতান মাহমুদ ছিলেন বুদ্ধিমান, মুত্তাকী, শিল্প ও সাহিত্যানুরাগী এবং এসবের পৃষ্ঠপোষক। তিনি ছিলেন ন্যায়পরায়ণতা, ধর্মপরায়ণতা ও সুবিচারের পক্ষপাতী। একটি ক্ষুদ্র পার্বত্য রাজ্যকে শুধু বাহুবলে এক বিশাল সমৃদ্ধিশালী সাম্রাজ্যে পরিণত করা কম কৃতিত্বের বিষয় নয়।

৮. প্রকৃত অর্থে সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা: 

সুলতান মাহমুদ শুধু সৈনিক ও সেনানায়কই ছিলেন না, প্রকৃত অর্থে তিনি এক বিশাল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতাও ছিলেন। যদিও সমসাময়িক ঐতিহাসিকগণ তাঁকে সমালোচনার বাণে বিদ্ধ করেছেন। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিচার করলে দেখা যায়, সত্যিই তিনি একজন প্রখ্যাত সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠাতা। 

৯. যোগ্য প্রশাসক : 

সুলতান মাহমুদ একজন ন্যায়পরায়ণ ও সুদক্ষ শাসক ছিলেন। নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা এবং বিচারকার্যে ন্যায় ও সততা রক্ষা করে তিনি সর্বসাধারণের কৃতজ্ঞভাজন হয়েছিলেন।

১০. ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে মাহমুদ : 

সাফল্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল গুণই তাঁর চরিত্রে দেখা যায়। শাসক হিসেবে তিনি আদর্শস্থানীয়। ঐতিহাসিক গীবনের ভাষায়— Sultan Mahmud was the greatest king of the world. তিনি ইসলামী আদর্শের একজন নিষ্ঠাবান অনুসারী ছিলেন। সাহিত্য ও শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতার ফলে তাঁর দরবারে প্রসিদ্ধ কবি ও জ্ঞানী-গুণীবর্গের সমাবেশ ঘটেছিল ।

১১. ইসলামের পতাকাবাহী : 

প্রকৃতপক্ষে সুলতান মাহমুদই ছিলেন ভারতে ইসলাম প্রচারের ধারক বাহক। কারণ তাঁর অভিযানগুলো পরোক্ষভাবে ভারতে ইসলাম প্রচারের পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। তাই ঐতিহাসিক হেগ বলেন - He (Mahmud) was the first to carry the banner of Islam into the heart of India.

১২. মৃত্যু : 

সুলতান মাহমুদ ৯৯৭-১০৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করার পর মৃত্যুমুখে পতিত হন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৬০ বছর। ঐতিহাসিক এস. এম. জাফর বলেন, মৃত্যুকালে তিনি খোরাসান, ইরাক, পারস্য, আফগানিস্তান, সিন্ধু, পাঞ্জাব প্রভৃতি দেশের সমন্বয়ে এক বিরাট সাম্রাজ্য রেখে যান।

■ সুলতান মাহমুদের বিজয় অভিযানসমূহ:

 গজনীর সুলতান মাহমুদের ভারতবর্ষে উল্লেখযোগ্য অভিযানগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো:

১. খায়বার অভিযান : 

খায়বার পাস সীমান্তের কতকগুলো দুর্গ অধিকার করে সুলতান মাহমুদ স্বীয় রাজ্যের সীমান্ত সুরক্ষিত করেন। ১০০০ খ্রিস্টাব্দের এ অভিযানই ছিল এ উপমহাদেশে সুলতান মাহমুদের সর্বপ্রথম অভিযান ।

২. জয়পালের বিরুদ্ধে অভিযান : 

১০০১ খ্রিস্টাব্দে ১০ হাজার সৈন্য নিয়ে সুলতান মাহমুদ পিতৃশত্রু পাঞ্জাবের রাজা জয়পালের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। পেশোয়ারের কাছে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধে জয়পাল শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন। মাহমুদ জয়পালকে পরাজিত করে সিন্ধু দেশের পশ্চিম তীরবর্তী শহর উধ দখল করে গজনীতে প্রত্যাবর্তন করেন।

৩. ভীরা জয় : 

ঐতিহাসিক নিজামউদ্দিন, বলেন, ১০০৪–৫ খ্রিস্টাব্দে সুলতান মাহমুদ ঝিলামের পশ্চিম তীরের রাজ্য ভীরার নৃপতি বিজয় রায়ের বিরুদ্ধে সামরিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগে অভিযান প্রেরণ করেন। 

মাহমুদের বাহিনীর সঙ্গে বিজয় রায়ের সৈন্য দলের তিন দিন ধরে তুমুল যুদ্ধ চলে; কিন্তু চতুর্থ দিনে মুসলিম বাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে ভীরার দুর্গ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। হিন্দু রাজা ধৃত হওয়ার ভয়ে ছুরিকাঘাতে আত্মহত্যা করেন। ফলে ভীরা এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চল সুলতান মাহমুদের পদানত হয়।

৪. মুলতান বিজয় : 

১০০৬ খ্রিস্টাব্দে সুলতান মাহমুদ মুলতানের শিয়া শাসক আবুল ফাতেহ দাউদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। সুলতান মাহমুদের আগমনের সংবাদ শুনে দাউদ রাজ্য ছেড়ে পলায়ন করলে মুলতান মাহমুদের দখলে আসে। 

অতঃপর মুলতান হতে প্রত্যাবর্তনের পূর্বে মাহমুদ আনন্দ পালের পুত্র সুখ পালের উপর শাসনভার অর্পণ করেন। সুখ পাল ইসলাম গ্রহণ করে নেওয়াশা শাহ নাম ধারণ করেন।

৫. সুখ পালের পরাজয় : 

সুলতান মাহমুদ এবং ইলাক খানের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ চলার সুযোগে সুখ পাল ১০০৭ খ্রিস্টাব্দে ইসলাম পরিত্যাগ করে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। বলখের যুদ্ধের পরিসমাপ্তিতে মাহমুদ সুখ পালের ধৃষ্টতার জন্য মুলতানে অভিযান প্রেরণ করেন। কিন্তু সীমান্তে পৌঁছে সংবাদ পেলেন, তাঁর আমীরগণ সুখ পালকে পরাজিত ও বন্দি করেছে। তাঁকে ৪,০০,০০০ দিরহাম প্রদানে বাধ্য করা হয় এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।

৬. আনন্দ পালের বিরুদ্ধে অভিযান : 

১০০৮ খ্রিস্টাব্দে সুলতান মাহমুদ আনন্দ পালের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। আনন্দ পাল তাঁকে বাধা দেয়ার জন্য উজ্জয়িনী, গোয়ালিয়র, কনৌজ, দিল্লী ও আজমীরের হিন্দু রাজন্যবর্গের সাহায্যে এক বিশাল সম্মিলিত বাহিনী গঠন করে অগ্রসর হন। 

উন্দের নিকট উভয় পক্ষে এক ভীষণ যুদ্ধ সংঘটিত হয় । মাহমুদ যুদ্ধে জয়ী হন এবং অপরিমিত দ্রব্যসামগ্রী তাঁর হস্তগত হয় ।

৭. নগরকোট বিজয় : 

১০০৯ খ্রিস্টাব্দে সুলতান মাহমুদ ভারতে আক্রমণ চালিয়ে কাংড়া পাহাড়ের কাছে অবস্থিত নগরকোট আক্রমণ ও অধিকার করেন। ঐতিহাসিক ফিরিশতার মতে, এ দুর্গ অধিকার করে মাহমুদ ৭ লক্ষ স্বর্ণ মুদ্রা, ২শ মণ খাঁটি সোনা, ৭শ মণ স্বর্ণ ও রৌপ্যপাত, ২ হাজার মণ অপরিশোধিত রৌপ্য এবং ২০ মণ মণিমুক্তা লাভ করেন।

৮. দাউদের পরাজয় : 

১০১০ খ্রিস্টাব্দে দুর্ধর্ষ ঘোর উপজাতিদের বশ্যতা স্বীকারে বাধ্য করে সুলতান মাহমুদ মুলতানের বিশ্বাসঘাতক শাসনকর্তা দাউদের বিরুদ্ধে পুনরায় অভিযান পরিচালনা করেন। কারামাতী নেতা দাউদ যুদ্ধে পরাজিত হলে তাকে ঘোরের দুর্গে কারারুদ্ধ করা হয়।

৯. ত্রিলোচন পালের বিরুদ্ধে অভিযান : 

১০১৪ খ্রিস্টাব্দে মাহমুদ আনন্দ পালের পুত্র ত্রিলোচন পালের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। ত্রিলোচন পাল উপায়ান্তর না দেখে কাশ্মীরে পলায়ন করেন। মাহমুদ কাশ্মীর আক্রমণ করে আশ্রিত ত্রিলোচন পাল ও আশ্রয়দাতা রাজা তুরঙ্গকে পরাভূত করেন। অতঃপর ভীম পালের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করলে সমগ্র পাঞ্জাব সুলতান মাহমুদের সাম্রাজ্যভুক্ত হয়।

১০. থানেশ্বর বিজয় : 

সুলতান মাহমুদের যুদ্ধাভিযানের মধ্যে অন্যতম আকর্ষণীয় ঘটনা ছিল থানেশ্বর বিজয়। ১০১৪ খ্রিস্টাব্দে হিন্দু ধর্মের এ পবিত্র কেন্দ্রে মাহমুদ অভিযান করলে স্থানীয় হিন্দু রাজা বশ্যতা স্বীকার করে এবং অসংখ্য

ধনসম্পদসহ থানেশ্বর দুর্গ মুসলমানদের হস্তগত হয়। কথিত আছে, এ শহরের প্রাচীন মন্দিরে রক্ষিত ব্রোঞ্জ দেবতা চক্রস্বামীকে গজনীতে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনাটির সত্যতা সম্বন্ধে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে।

১১. কাশ্মীর অভিযান : 

১০১৫-১০১৬ খ্রিস্টাব্দে সুলতান মাহমুদ দ্বিতীয় বারের মতো কাশ্মীরে অভিযান পরিচালনা করেন। কিন্তু তাঁর এ অভিযান সফল হয়নি। কারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, প্রতিকূল পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং লোহকোট দুর্গের দুর্ভেদ্যতা মুসলিম অভিযান ব্যর্থ করে দেয়।

১২. মথুরা ও কনৌজ বিজয় : 

১০১৮ খ্রিস্টাব্দে মাহমুদ কনৌজ অভিযান করলে বুলন্দ শহরের নৃপতি হরদত্ত বশ্যতা স্বীকার করে ইসলাম গ্রহণ করেন। অতঃপর তিনি বৃন্দাবন ও মথুরা পদানত করে ১০১৯ খ্রিস্টাব্দে কনৌজের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হলে প্রতিহার রাজ রাজ্যপাল বিনা শর্তে সুলতান মাহমুদের বশ্যতা স্বীকার করেন। ঐতিহাসিক নাজিম বলেন, এ অভিযানে মাহমুদ প্রচুর অর্থসম্পদ লাভ করেন।

১৩. চান্দেলা রাজার বিরুদ্ধে অভিযান : 

ঐতিহাসিক ঈশ্বরীপ্রসাদ বলেন, ১০১৯ খ্রিস্টাব্দে সুলতান মাহমুদ চান্দেলা রাজার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। উপায়ান্তর না পেয়ে চান্দেলা রাজা রাজ্য ছেড়ে পলায়ন করেন। সুলতান বিজয়ী বেশে রাজধানীতে প্রবেশ করেন।

১৪. গোয়ালিয়র অভিযান : 

১০২১-২২ খ্রিস্টাব্দে সুলতান মাহমুদ গোয়ালিয়রে তাঁর চতুর্দশ অভিযান পরিচালনা করেন। ঐতিহাসিক হাবিবের মতে, সুলতান এ অভিযানে অসংখ্য ছুতার রাজমিস্ত্রী ও কামার সঙ্গে নিয়ে যান। কারণ তাঁর উদ্দেশ্য ছিল পাঞ্জাবে একটি সুপরিকল্পিত প্রশাসনিক কাঠামো স্থাপন করা। যাই হোক, গোয়ালিয়রের হিন্দু রাজা সুলতানের আনুগত্য স্বীকার করলে তিনি গজনীতে প্রত্যাবর্তন করেন।

১৫. কালিঞ্জর বিজয় : 

ঐতিহাসিক এ হাসান বলেন, সুলতান মাহমুদ ১০২৩ খ্রিস্টাব্দে তাঁর পঞ্চদশ অভিযান পরিচালনা করেন কালিঞ্জরের বিরুদ্ধে। এ সময় তিনি গোণ্ডার প্রখ্যাত দুর্গটি অবরোধ করেন। কালিঞ্জর রাজ সুলতানকে বার্ষিক করদানের প্রতিশ্রুতিতে আত্মরক্ষা করেন ।

১৬. সোমনাথ বিজয় : 

সোমনাথ বিজয় সুলতান মাহমুদের রাজত্বকালের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ঐতিহাসিক ইবনুল আসির, ইবনে খালদুন, ফিরিশতা, ডব্লিউ হেগ প্রমুখের মতে, সোমনাথ বিজয় মাহমুদের সাধ্যের বাইরে বলে পুরোহিতগণ আস্ফালন করলে মাহমুদ এক বিরাট বাহিনী নিয়ে ১০২৬ খ্রিস্টাব্দে সোমনাথ বিজয় করেন। 

হিন্দুদের সম্মিলিত বাহিনী যুদ্ধ করেও পরাজিত হয়। ড. ঈশ্বরীপ্রসাদ বলেন — The victory of Somnath added fresh launch to Mahmuds brow.

১৭. জাঠদের বিরুদ্ধে অভিযান : 

১০২৭ খ্রিস্টাব্দে সুলতান মাহমুদ দুর্ধর্ষ জাঠ উপজাতিদের শায়েস্তা করার জন্য গজনী হতে ভারতবর্ষে যুদ্ধাভিযান করেন। তাঁর এ অভিযান ছিল বিশেষ আকর্ষণীয়। চৌদ্দশ নৌকার একটি বহর তৈরি করে সুলতান মাহমুদ মুলতান হতে জাঠদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। 

প্রতিটি নৌকায় বিশ জন তীরন্দাজ এবং অগ্নি নিক্ষেপণের সরঞ্জাম ছিল। বিদ্রোহী বিশ্বাসঘাতক জাঠগণ সম্পূর্ণরূপে পরাজিত এবং অসংখ্য জাঠ নিহত হয়।

নিত্য নতুন সকল আপডেটের জন্য জয়েন করুন

Telegram Group Join Now
Our Facebook Page Join Now
Class 8 Facebook Study Group Join Now
Class 7 Facebook Study Group Join Now
Class 6 Facebook Study Group Join Now

Post a Comment