অযু করার সঠিক নিয়ম (বিস্তারিত জানুন)

অযু করিবার সঠিক নিয়ম ও অযুর দোয়া, নিয়ত, ফরয, সুন্নাত, মোস্তাহাব ও মাকরুহ ও অযু ভঙ্গের কারণসমূহ, অযুর নিয়ত আরবি ও বাংলা, অযুর দোয়া আরবি ও বাংলা
Follow Our Official Facebook Page For New Updates


Join our Telegram Channel!

 অযু করার সঠিক নিয়ম ও অযুর দোয়া, নিয়ত, ফরয, সুন্নাত, মোস্তাহাব ও মাকরুহ ও অযু ভঙ্গের কারণসমূহ: (Correct rules for ablution)

অযু করার সঠিক নিয়ম

শরীরের পবিত্রতার উপর সমস্ত ইবাদত নির্ভর করে। পায়খানা প্রস্রাব হইতে উত্তমরূপে পাক হওয়ার পর নামাজ, তিলাওয়াতে কোরান, যিকর-আযকার, দোয়া-দরূদ ইত্যাদি যাবতীয় ইবাদতের পূর্বে অযু করিয়া শরীরকে পবিত্র করিতে হয়। 

শরীর পবিত্র না থাকিলে কোন ইবাদতই কবুল হইবে না। সুতরাং অযুর সময় শরীরের অঙ্গগুলি যাহাতে পানি দ্বারা ভালভাবে ভিজিয়া যায় সেই দিকে লক্ষ্য রাখিতে হইবে।পবিত্র হাদীছ শরীফে আছে।  بسم الله الرحمن الرحيم  পড়িয়া অযু আরম্ভ করিলে সমস্ত শরীর পাক হয়।  بسم الله الرحمن الرحيم  না পড়িয়া অযু আরম্ভ করিলে যে অঙ্গ ধোয়া যায় শুধু সেই অঙ্গই পাক হয়।

 অযু করার সঠিক নিয়ম:


১। অযুর প্রথমে  (আউজু বিল্লাহে মিনাশ শাইত্বানির রাজীম) অর্থ : আমি আল্লাহ্ তায়ালার নিকট বিতাড়িত শয়তান হইতে আশ্রয় চাহিতেছি। এবং (বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহীম) 

অর্থঃ “আমি আল্লাহ্ তায়ালার নামে আরম্ভ করিতেছি, যিনি পরম করুণাময়, মহান দয়ালু।” পড়িয়া অযু আরম্ভ করিবে। তারপর অঙ্গুলী খেলাল সহ তিনবার হাত ধোয়ার সময় অযুর নিয়ত করিবে ও নীচের দোয়া পড়িবে ।

অযুর নিয়ত আরবি ও বাংলা:

نویت ان اتوضاء رفعا للحدث واستباحة للصلوةوتقربا إلى الله تعالى .

উচ্চারণ:

নাওয়াইতু আন্ আতাওয়াজ্জাআ রাআল্ লিল হাদাসে ওয়াস্তেবাহাতাল লিচ্ছালাতে ওয়া তাকাররুবান ইলাল্লাহে তায়ালা । 

অর্থঃ আমি অপবিত্রতা দূরীকরণ ও নামাজ বৈধকরণ এবং আল্লাহ্ তায়ালার নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে অযুর নিয়ত করিলাম ।

অযুর দোয়া আরবি ও বাংলা:

 - بسم الله العلي العظيم والحمد لله على دين  الاسلام‘ الاسلام حق والكفر باطل - الاسلام نور و الكفر ظلمة .

বাংলা অনুবাদ:

বিছমিল্লাহিল আলিয়্যিল আযীমে, ওয়াল্ হাম্দু লিল্লাহে আলা দীনিল ইছ্‌ছ্লামে, আল্‌ ইলামু হাক্কুন্ ওয়াল্ কুফরু বাতেলুন। আল্ ইছলামু নূরুন ওয়াল কুফরু যুলমাতুন।

অর্থঃ আল্লাহ্ তায়ালার নামে আরম্ভ করিতেছি যিনি উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন মহান এবং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ তায়ালার জন্য দ্বীন ইসলাম প্রদান করার কারণে, দ্বীন ইসলাম সত্য এবং কুফর বাতেল, দ্বীন ইসলাম আলো এবং কুফর অন্ধকার।

তারপর প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়ার সময় পেতে টান بسم الله الرحمن الرحيم পড়িবে ।

 অযু করার সঠিক নিয়ম

২। হাত ধোয়ার পর মুখভর্তি পানি লইয়া তিনবার কুলি ও গড়গড়া করিবে। কিন্তু রোযা থাকা অবস্থায় গড়গড়া করিতে পারিবে না। 

৩। তারপর তিনবার ডান হাতে নাকে পানি দিয়া বাম হাতের শাহাদত ও বৃদ্ধাঙ্গুল দ্বারা নাকের ঠোলে পানি ঢুকাইবে। 

৪। নাক ধোয়ার পর সমস্ত মুখমণ্ডল উভয় হাতে পানি লইয়া তিনবার ধৌত করিবে। কপালের উপরিভাগের চুল উঠার জায়গা হইতে থুনীর নীচে পর্য্যন্ত এবং উভয় কানের লতি পর্যন্ত ধৌত করিবে।

যাহাদের দাড়ি ঘন বা বেশী তাহারা দাড়ির গোড়ায় পানি প্রবেশ করাইতে না পারিলেও অযুর কোন ক্ষতি হইবে না। তবে যাহাদের দাড়ি পাতলা তাহাদের দাড়ির গোড়ায় পানি প্রবেশ করাইতে হইবে।

৫। তারপর উভয় হাত কনুইর উপর পর্যন্ত তিনবার ভালমতে ধৌত করিবে। 

অযু করার সঠিক নিয়ম

৬। তারপর নতুন পানি দ্বারা একবার হাত ধুইয়া মাথা মসেহ্ করিবে। মাথা মসেহ্ করিবার নিয়ম এই যে, উভয় হাতের কনিষ্ঠ, অনামিকা ও মধ্যমা আঙ্গুল সমূহের মাথাগুলি পরস্পর একত্রিত করিয়া মাথার সম্মুখে স্থাপন করিবে, কিন্তু শাহাদত, বৃদ্ধাঙ্গুলী এবং হাতের তালু মাথা হইতে পৃথক রাখিবে। 

তারপর মাথার উপরিভাগ হইতে অঙ্গুলী টানিয়া ঘাড় পর্যন্ত নিবে। তারপর হাতের তালু দ্বারা মাথার দুই পার্শ্ব মুছিতে মুছিতে সম্মুখের দিকে আনিবে। তারপর শাহাদত অঙ্গুলী কানের ভিতর প্রবেশ করাইয়া বৃদ্ধাঙ্গুলী দ্বারা কানের উপরিভাগ মসেহ করিবে। 

তারপর দুই হাতের আঙ্গুলের পিঠ দ্বারা ঘাড় মসেহ করিবে। উল্লিখিত নিয়মে মসেহ করিলে মসেহের ফরয, সুন্নত ও মোস্তাহাব আদায় হইবে। 

অযু করার সঠিক নিয়ম

৭। উভয় পায়ের গিরার উপর পর্যন্ত ভালমতে তিনবার ধৌত করিবে। পা ধৌত করার সময় ডান হাতে পানি দিয়া বাম হাতে আঙ্গুল খেলাল করিয়া পা ভালমতে পরিষ্কার করিয়া ধৌত করিবে।

অযু শেষ করিয়া একবার ইস্তিগফার পড়িবে । (আস্তাগফিরুল্লাহা রাব্বী মিন কুল্লি যামবিওঁ ওয়া আতুবু ইলাইহে)

অর্থঃ আমি আমার প্রভু আল্লাহ্ তায়ালার নিকট সমস্ত গুনাহ্ (বড় গুনাহ্ ছোট গুনাহ্, জানিয়া করিয়াছি গুনাহ্ ; না জানিয়া করিয়াছি গুনাহ্) হইতে মাফ চাহিতেছি এবং (পাপ আর না করার দৃঢ় সংকল্প করিয়া অনুতপ্ত হৃদয়ে) তাঁহারই (আল্লাহ্ তায়ালার) নিকট তওবা (প্রত্যাবর্তন) করিতেছি।

অজুর শেষে কালেমা শাহাদাত পড়িবে।

أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

উচ্চারণ : ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।’

অর্থ : ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বুদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরিক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসুল।’ (মুসলিম, মিশকাত)

উপকারিতা : হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে কালেমায়ে শাহাদাত পড়বে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে; ওই ব্যক্তি যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে প্রবেশ করবে। (মুসলিম, মিশকাত)

অতপর এ দোয়াটি পড়া-

اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنْ التَّوَّابِينَ ، وَاجْعَلْنِي مِنْ الْمُتَطَهِّرِينَ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মাঝআলনি মিনাত তাউয়্যাবিনা ওয়াঝআলনি মিনাল মুতাত্বাহ্‌হিরিন।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাকে তওবাকারীদের অন্তর্ভূক্ত করুন এবং পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের মধ্যে শামিল করে নিন।’ (তিরমিজি, মিশকাত)

এই দোয়াটি পড়িলে তাহার সমস্ত গুনাহ মাফ হইবে ও বেহেশতে তাহার জন্য আটটি দরজা খোলা থাকিবে। সে যে কোন দরজা দিয়া বেহেশতে প্রবেশ করিতে পারিবে।

অযুর ফরয সমূহ:

অযুর ফরয চারটি:

(১) কপালের উপরিভাগের চুলের উৎপত্তির স্থান হইতে নীচের থুতনী এবং এক কানের লতি হইতে অন্য কানের লতি পর্যন্ত সমস্ত মুখমণ্ডল ধোয়া। 

ঘন বা বেশী দাড়ি হইলে দাড়ির গোড়ায় পানি প্রবেশ করানো ফরয নহে। কিন্তু দাড়ি পাতলা হইলে গোড়ায় পানি প্রবেশ করানো ফরয। 

(২) উভয় হাতের কনুইর উপর পর্যন্ত ধোয়া।

(৩) মাথার চারিভাগের এক ভাগ ভিজা হাতে মসেহ্ করা। মাথা মসেহ্ করিবার নিয়ম এই যে, পানিতে হাত ডুবাইয়া উভয় হাতের কনিষ্ঠ, অনামিকা ও মধ্যমা আঙ্গুলসমূহের মাথাগুলি পরস্পর একত্রিত করিয়া মাথার সম্মুখে স্থাপন করিবে কিন্তু শাহাদত, বৃদ্ধাঙ্গুলী এবং হাতের তালু মাথা হইতে পৃথক রাখিবে।

অযুর ফরয চারটি:

তারপর মাথার উপরিভাগ হইতে অঙ্গুলী টানিয়া ঘাড় পর্যন্ত নিবে। তারপর হাতের তালু দ্বারা মাথার দুই পার্শ্ব মুছিতে মুছিতে সম্মুখের দিকে আনিবে । তারপর শাহাদত অঙ্গুলী কানের ভিতরে প্রবেশ করাইয়া বৃদ্ধাঙ্গুলী দ্বারা কানের উপরিভাগ মসেহ্ করিবে। 

তারপর দুই হাতের আঙ্গুলের পিঠ দ্বারা ঘাড় মসেহ্ করিবে। উল্লিখিত নিয়মে মসেহ্ করিলে মাসেহের ফরয, সুন্নত ও মোস্তাহাব আদায় হইবে।

(৪) উভয় পায়ের গিরার উপর পর্যন্ত ধোয়া।


অযুর সুন্নত সমূহ:

(১) অযুর নিয়ত করা। 

(২) বিছমিল্লাহির রাহ্মানির রাহীম বলিয়া অযু আরম্ভ করা। 

(৩) অযুর পূর্বে মিসওয়াক করা। 

(৪) প্রথমে দুই হাতের কব্জি তিনবার ধোয়া। 

(৫) গড়গড়া সহ তিনবার কুলি করা। 

(৬) ডান হাতে নাকে পানি দিয়া বাম হাতে ঝাড়িয়া ফেলা। (কিন্তু রোযাদার গড়গড়া করিবেনা ও নাকের কোমল অংশের উর্ধে পানি দিবে না)

(৭) অঙ্গুলী দ্বারা দাড়ি খেলাল করা। (অঙ্গুলী নীচের দিক হইতে উপরের দিকে টানিবে।) 

৮) উভয় হাত ও পায়ের অঙ্গুলী খেলাল করা। 

(৯) অযুর প্রত্যেক অঙ্গ তিনবার ধোয়া। 

(১০) এক অঙ্গ না শুকাইতে অন্য অঙ্গ ধোয়া। 

(১১) অযুর তরতীবের প্রতি লক্ষ্য রাখা। 

(১২) সমস্ত মাথা একবার মসেহ করা। বৃদ্ধাঙ্গুলীর পেট দ্বারা উভয় কান মসেহ করা।


অযুর মোস্তাহাব সমূহ:

১। ডান দিক হইতে অযু আরম্ভ করা। 

২। ঘাড় মসেহ্ করা। 

৩। উচ্চ স্থানে বসিয়া অযু করা। 

৪। প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়া এবং মসেহ্ করিবার সময় “বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” বলা। 

৫। হাতে আংটি থাকিলে উহার ভিতর পানি প্রবেশ করান। 

৬। অযু করিবার সময় সাংসারিক কথাবার্তা না বলা। 

৭। অযুর অবশিষ্ট কিছু পানি দাঁড়াইয়া পান করা। 

৮। ডান হাতে পানি দ্বারা কুলি করা। 

৯। কানের ছিদ্রে কনিষ্ঠাঙ্গুলী প্রবেশ করান। 

১০। ইবাদত করার পর অযু থাকা


অযুর মাকরূহ সমূহ:

১। মুখে জোরে পানি নিক্ষেপ করা।

২। বিনা ওযরে বাম হাতে পানি দেওয়া ।

৩। সাংসারিক কথাবার্তা বলা।

৪। তিনবারের অতিরিক্ত কোন অঙ্গ ধোয়া বা কম ধোয়া।

৫। বিনা ওযরে অপরের সাহায্যে অযু করা।

৬। খুব কম পানি খরচ করা। ৭। অতিরিক্ত পানি খরচ করা।

৮। বাম হাতে পানি দ্বারা কুলি করা এবং ডান হাতে নাক পরিস্কার করা ।


অযু ভঙ্গের কারণ সমূহ:

১। মল-মূত্রের রাস্তা দিয়া বায়ু বা অন্য কোন কিছু বাহির হইলে। 

২। শরীরের ক্ষতস্থান হইতে রক্ত কিম্বা পুঁজ বাহির হইয়া গড়াইয়া পড়িলে,  গড়াইয়া না পড়িলে অযু ভঙ্গ হয় না। 

৩। রক্ত বা আহাৰ্য্য দ্রব্য কিম্বা পীৎ পানি মুখ ভরিয়া বমি হইলে; মুখ ভরিয়া এই সমস্ত দ্রব্য বাহির না হইলে অযু যাইবে না। 

৪। থুথুর সহিত রক্তের ভাগ বেশী বাহির হইলে। থুথুর চেয়ে রক্ত কম হইলে অযু যাইবে না। থুথু ও রক্তের ভাগ সমান হইলে অযু করা উত্তম। 

৫। চিৎ বা কাত হইয়া বালিশে ঠেস দিয়া নিদ্রা গেলে; নামাজের ভিতর নিদ্রা গেলে অযু ভঙ্গ হয় না। 

৬। রুকু ও সিজদা বিশিষ্ট নামাজে বালেগ ব্যক্তি উচ্চস্বরে হাসিলে অযু ভঙ্গ হইবে।


অযু করিবার সঠিক নিয়ম,  অযু করিবার সঠিক নিয়ম,  অযু করিবার সঠিক নিয়ম, অযু করিবার সঠিক নিয়ম,  অযু করিবার সঠিক নিয়ম  অযু করিবার সঠিক নিয়ম  অযু করিবার সঠিক নিয়ম  অযু করিবার সঠিক নিয়ম,

নিত্য নতুন সকল আপডেটের জন্য জয়েন করুন

Telegram Group Join Now
Our Facebook Page Join Now
Class 8 Facebook Study Group Join Now
Class 7 Facebook Study Group Join Now
Class 6 Facebook Study Group Join Now
Join our Telegram Channel!
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.