হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মুযেজা
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর কিছু মুযেজা, যেমন, শবে মেরাজ বা রাতের অভিযান ও আকাশ ভ্রমণ, চাঁদকে দুই টুকরো করা, অফুরন্ত পানি ও খাবার এসব মুযেজা নিয়ে আজকে আমাদের পর্ব।
আজকের পোষ্ট এর মাধ্যমে আপনারা রাসুল (সা:) এর অনেক মুজিযা ও তার সত্যতা প্রমাণসহ বিস্তারিত জানতে পারবেন। আশাকরি পুরো লেখাটা পড়লে আপনাদের ভীষণ ভালো লাগবে।
আল্লাহর পক্ষ থেকে সারা জীবনভর রাসূল (দ:) কে অনেক মুযেজা দান করা হয়। আগেই বলা হয়েছে যে কুরআন নাজিল হওয়া ও কুরআন নিজেই সব মুযেজার মধ্যে সেরা।
নীচে অল্প কিছু অলৌকিক ঘটনার কথা বলা হলো:
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনের কিছু মুযেজা
রাতের অভিযান ও আকাশ ভ্রমণ (শবে মেরাজ):
রাসুল (দ:) এর জীবনে যে সব আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো শবে মেরাজ। এটি হিজরতের এক বছর সাত মাস আগে ঘটে। কুরআনের সুরা ইসরার প্রথম আয়াতে শবে মেরাজ সম্পর্কে বলা হয়েছে--
নিশ্চয়ই আল্লাহ সব শুনেন, সব দেখেন ( সুরা ইসরা ; ১৭ : ১)
এরপর রাসুল (দ:) বোরাকে চড়ে মক্কার মসজিদ উল হারাম থেকে মসজিদ উল আকসায় যান (আকসা শব্দের অর্থ দূরবর্তী)।
এই দুই মসজিদের মধ্যে দূরত্ব ১২৩৫ কিলোমিটার মসজিদ উল আকসা থেকে রাসুল (দ:) তাঁর রাত্রিকালীন অভিযানের দ্বিতীয় পর্ব শুরু করেন।
সপ্ত আসমান ভেদ করে সিদরাতুল মুনতাহা (মহাকাশের সর্বোচ্চ সীমার কুল গাছের) কাছে ও এরপরে মহান স্রষ্টার কাছে তিনি যান।
সত্যতা:
ইবনে কাসির বলেন কমপক্ষে ২৫ জন সাহাবী শবে মেরাজের কাহিনী রাসুল (দ:) এর কাছ থেকে শুনেন। এই সংখ্যা ৪৫ জনও হতে পারে।
যাদের বর্ণনা সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য বলে ধরা হয় তারা হলেন আনাস ইবনে মালিক আবু হুরায়রা, আবু সৈয়দ আল খুদরী মালিক ইবনে সাসা, আবু দার আল গিফারী, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আবদুল্লাহ ইবনে মাসুদ এবং উম্মে হানী।
হাদীসে বিস্তারিত বলা হয়েছে রাসূল (দ:) মেরাজে গিয়ে কী দেখেছিলেন। আনাস ইবনে মালিকের বর্ণনায় মুসলিম শরীফ থেকে মেরাজে কী কী ঘটেছিল সে সম্পর্কে আমরা জেনেছি।
জিবরাইল (আ: ) এর সাথে রাসুল (দ:) আসমান ভেদ করে আল্লাহর কাছে যাওয়ার সময় বিভিন্ন নবী ও রাসুল (দঃ ) এর দেখা পান। এরা হলেন আদম, ঈসা, ইয়াহিয়া, ইউসুফ ইদরিস, হারুণ, মুসা ও ইবরাহীম (আ:) ।
তাঁরা বিশ্বাস রাখে আল্লাহ, ফিরিশতা রাসুল বিশ্বাস আসমানী কিতাব ও আল্লাহর রাসুলদের উপর।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মুযেজা:
তাঁরা বলে, আমরা রাসুলদের মধ্যে কোন পার্থক্য করি না। তাঁরা বলে, আমরা শুনেছি ও কবুল করেছি। আমরা আপনার ক্ষমা চাই হে আমাদের পালনকর্তা। আপনার কাছেই আমরা ফিরে যাবো ” ( বাকারা ; ২: ২৮৫)।
এরপর রাসুল (দ:) আল্লাহর কাছে যান ও সেখানেই তিনি আদেশ লাভ করেন যে মুসলমানরা এখন থেকে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে। আকাশে সিদরাতুল মুনতাহায় রাসুল (দ:) এর যাওয়া নিয়ে কুরআনে বলা হয়েছে :
“ নিশ্চয়ই সে { মুহাম্মাদ (দ:) তাকে { জিবরাইল (আ:) } কে আরেকবার দেখেছিলো শেষ সীমানার কুল গাছের কাছে ; যার পাশে আছে জান্নাত যা দিয়ে ঢাকা থাকার কথা ( অর্থাৎ আল্লাহর নূর )
দিয়ে কুল গাছটি ঢাকা ছিল ; তাঁর দৃষ্টি বিভ্রাট ঘটে নি বা দৃষ্টি লক্ষ্যচ্যূত হয় নি। সে তাঁর প্রভুর কিছু সেরা নিদর্শন দেখেছে। (সুরা নাজম ৫৩: ১৩-১৮ )
ফিরে আসার পর রাসুল (দ:) কুরাইশদের বললেন গত রাতে কী ঘটেছে। অবিশ্বাসীরা এমন কী কিছু দুর্বল ঈমানের মুসলমানরাও রাসূল (দ:) এর মুযেজায় অবিশ্বাস করলো।
তারা আবু বকর (রা: ) এর কাছে গিয়ে রাসূল (দ:) এর নামে ভিত্তিহীন অভিযোগ আনলো। আবু বকর (রা:) কে কাফিররা প্রশ্ন করলো শবে মেরাজের ঘটনা তিনি সত্য বলে মানেন কী না ও রাসূল (দ:) কে তিনি এখনো বিশ্বাস করেন কি না?
জবাবে আবু বকর (রা: )জানান, যদি রাসুল (দ:) এটা বলে থাকেন, তাহলে হ্যাঁ, আমি তাঁকে বিশ্বাস করি।
আল্লাহর রাসুল (দ:) এর প্রতি এই বিশ্বস্বতা ও আনুগত্যের জন্য তাকে হযরত মুহাম্মাদ (দ:) সিদ্দিক (সম্পূর্ণ বিশ্বাসী) উপাধি দেন।
কাফিররা হযরত মুহাম্মাদ (দ:) কে নানা প্রশ্ন করে জানার জন্য যে তিনি সত্যি না মিথ্যা বলছেন। রাসুল (দ:) তাঁদের সব প্রশ্নের সঠিক জবাব দেন।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মুযেজা:
হাদীসে এই ঘটনার উল্লেখ আছে। তারা জানতে চায় : মসজিদ উল আকসা দেখতে কেমন ? এদের মধ্যে কেউ কেউ জেরুজালেম সফর করেছিল ও এই মসজিদ দেখেছিল।
রাসুল (দ:) এর বর্ণনা শেষ হলে তারা বলে, খোদার কসম, এই উত্তর সঠিক (ইমাম আহমদ , মুসনাদ )
“আমার মনে আছে কুরাইশরা জানতে চাচ্ছিলো শবে মেরাজ সম্পর্কে। তারা প্রশ্ন করে বায়তুল মকদিস সম্পর্কে। আমি এ সম্পর্কে নিশ্চিত ছিলাম না---
তখন আল্লাহ আমাকে দেখানোর জন্য বায়তুল মকদিসকে উপরে তুলে ধরেন। তখন কুরাইশরা যে প্রশ্নই করলো আমি উত্তর দিতে পারলাম।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মুযেজা:
বলাই বাহুল্য এরপরেও কাফিররা রাসুল (দ:) এর মেরাজকে অস্বীকার করলো ও প্রমাণ চাইলো। আল্লাহর সাহায্যে রাসুল (দ:) তাদেরকে প্রমাণ দিলেন- যা তারা অস্বীকার করতে পারলো না।
এটা ছিল অমুক জায়গায়। ঐ দল আমাদেরকে দেখে ভয় পেয়েছিল এবং পথ বদল করে।
ঐ দলের উটের পিঠে সাদা ও কালো বস্তা আছে। ঐ উটটি ভয়ে চিৎকার করে ও পড়ে যায় । ” পরে যখন ঐ যাত্রী দল এসে পৌঁছায় তখন কুরাইশরা তাদেরকে ঐ রাতের ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করে। তারা উত্তরে তাই বলে যা রাসুল (দ:) বলেছিলেন।
রাতের ভ্রমণ ও আকাশে যাওয়া ( ইসরা ওয়াল মেরাজ ) রাসুল (দ:) এর অন্যতম সেরা মুযেজা যা তাঁর বার্তাকে শক্তিশালী করে। মেরাজের ঘটনা সত্যি গুরুত্বপূর্ণ।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কাফিররা সন্দেহ নিয়ে যত প্রশ্ন রাসুল (দ:) কে করেছিল , আল্লাহ সে সবের উত্তর দিতে তাঁকে সাহায্য করেন। এভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় যে রাসুল (দ:) সত্যবাদী।
আল্লাহ তাঁর রাসুল (দ:) এর জন্য চাঁদকে দুই টুকরো করেন:
আরেকটি অসাধারণ মুযেজা যা রাসুল (দ:) কে দান করা হয় তা হলো চাঁদকে দুই টুকরো করা। কুরআনে এই ঘটনার কথা বলা হয়েছে সুরা কামারে --“ কেয়ামতের সময় কাছেই এবং চাঁদ বিদীর্ণ হয়েছে ”
কুরআনে ’ এবং চাঁদ বিদীর্ণ হলো ' --- এই আয়াতে দুটি শব্দ বিদীর্ণ ও চাঁদ ব্যবহৃত হয়েছে ( ওয়াল সাকা আল কামার) ।
তাই বিদীর্ণ শব্দকে পৃথক হওয়া/ খন্ডে খন্ডে টুকরো হওয়া / আলাদা হওয়া ইত্যাদি।
চাঁদ ভাগ হওয়ার ঘটনা হাদীসের বিখ্যাত সংকলকদের বইতে আছে। এরা হলেন ইমাম আল বুখারী, ইমাম মুসলিম আত তিরমিযী, আহমেদ ইবনে হাম্বল, আবু দাউদ, আল হাকিম আল বায়হাকী ও আবু নাউম - - -
এ বিষয়ে কিছু নির্বাচিত হাদীস নীচে দেয়া হলো :
চাঁদের এক টুকরো পাহাড়ের পিছনে, অন্য টুকরো পাহাড়ের অন্য পাশে চলে যায়। আল্লাহর রাসুল (দ:) আমাদেরকে বললেন, তোমরা সাক্ষী থাকো ( মুসলিম ) ।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসুদ জানান- আল্লাহর রাসুল (দ:) এর সময়ে চাঁদ বিদীর্ণ হয়। পাহাড় চাঁদের এক টুকরোকে ঢেকে রাখে অন্য অংশ পাহাড়ের উপরে দেখা যায়। আল্লাহর রাসুল (দ:) বলেন: তোমরা সাক্ষী থাকো (মুসলিম) ।
আল্লাহর রাসুল (দ:) এর সময়ে চাঁদ দুই টুকরো হয়। চাঁদের এক অংশ পাহাড়ের উপরে , অন্য টুকরো পাহাড়ের পিছনে চলে যায়। তখন আল্লাহর রাসুল (দ: ) বলেন এই মুযেজা দেখো ( বুখারী )
মক্কার লোকেরা আল্লাহর রাসুল (দ:) এর কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন স্পষ্ট নিদর্শণ দেখতে চাচ্ছিলো। আল্লাহর অনুমতিতে রাসুল (দ:) তাদেরকে চাঁদ টুকরো করে দেখান ।
মক্কার লোকেরা রাসুল (দ:) কে মুজযা দেখাতে বলে। তাই দুইবার তিনি চাঁদকে বিচ্ছিন্ন করেন (মুসলিম)।
স্পষ্ট মুযেজা দেখার পরেও মূর্তি পূজারী কুরাইশরা রাসূল (দ:) কে বিশ্বাস করতে অস্বীকার করে। তারা যা দেখেছে তা অস্বীকার করার উপায় ছিল না। তাই তারা অভিযোগ করে যে এটা একটা যাদু:
তারা কোন নিদর্শন দেখলে অন্যদিকে ফিরে যায়, বলে এতো সেই আগেকার জাদু। তারা সত্যকে অস্বীকার করে ও নিজেদের খেয়াল ও ইচ্ছামতো চলে; সব কিছুরই জন্য নির্দিষ্ট সময় আছে ” (সুরা কামার; ৫৪ : ২-৩)
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মুযেজা:
“..আমাদের দৃষ্টি বিভ্রাট হয়েছে অথবা আমাদেরকে জাদুমন্ত্র করা হয়েছে ” ( সুরা হিজর; ১৫ : ১৫ )
বদিউজ্জামান সৈয়দ নুরসী জানান এই মুখেজা অনেক সাহাবী দেখেছেন। তিনি বলেন মুর্তি পুজারীরা এই মুযেজার সময় একেবারে অসহায়, শক্তিহীন হয়ে পড়ে।
রাসুল (দ:) এর অনেক গুরুত্বপূর্ণ মুযেজাগুলির মধ্যে এটিকে বলা হয় মুতাওয়াতির (বংশ পরম্পরা অনেক মানুষ যে ঘটনা জেনেছে ও অন্যকে বলেছে। এই ঘটনায় সন্দেহ করার কোন অবকাশ নেই)।
বিভিন্ন সুত্রে জানা যায় বলে যার সত্যতা সম্পর্কে মানুষ নিশ্চিত। বিভিন্ন সাহাবী এই মুযেজার কথা বলেন। এদের মধ্যে কয়েকজন হলেন ইবনে মাসুদ ইবনে আব্বাস ইবনে উমর আলী।
আনাস ও হুদায়ফা। সবচেয়ে বড় ব্যপার, কুরআন পুরো বিশ্বকে জানাচ্ছে প্রধান একটি মুযেজার কথা (সুরা কামার; ৫৪ : ১)।
এমন কী, ঐ সময়ের সবচেয়ে একগুঁয়ে কাফিররাও এই আয়াতকে অস্বীকার করতে পারে নি । তারা শুধু এটাই বলতে পেরেছিল, এটা যাদু। কাফিররাও জানতো যে চাঁদ টুকরো হয়েছে।
নুরসী এই মুযেজার অন্তর্দর্শী, অতি সুক্ষ ব্যাখ্যায় আরো বলেন :
মুযেজা ঘটে নবুয়তের প্রমাণ দিতে ও কাফিরদের বিশ্বাস করানোর জন্য - কিন্তু তাদেরকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করার জন্য নয়।
এই মুযেজার দরকার ছিল তাদেরকে বিশ্বাস করানোর জন্য যারা মুহাম্মাদ (দ:) এর নবুয়ত লাভের কথা শুনেছে। এই মুযেজা দুনিয়ার সব এলাকা থেকে দেখতে পাওয়া বা এমনভাবে সবাইকে দেখানো যাতে
কেউ এই ঘটনা অস্বীকার না করতে পারে --- এমনটি হলে তা সর্বজ্ঞানী আল্লাহর প্রজ্ঞা ও যে কারণে মানুষ দুনিয়ায় এসেছে তার সাথে খাপ খেতো না। মানুষকে আল্লাহ বুদ্ধি বিবেচনা দান করেছেন ইচ্ছাশক্তি দান করেছেন।
ঐ ঘটনা হয়তো জ্যোতির্বিদ্যায় অন্তর্ভুক্ত কোন বিষয় হিসাবে স্বীকৃতি পেত ।
এটা আর রাসুল (দ:) এর মুযেজা থাকতো না বা তাঁর নবুয়তের প্রমাণ হতো না; অথবা হয়তো তখন এটাকে এমন এক মুযেজা হিসাবে মানুষ দেখতো যাকে কোনভাবেই অস্বীকার করতে না পেরে তারা এটা মানতে বাধ্য হতো---
তাদেরকে যে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি আল্লাহ দিয়েছেন তার প্রয়োগ আর তারা ঘটাতে পারতো না। ফলে কয়লা ও হীরা { আবুল জাহল ও আবু বকর (রা:) } সব এক কাতারে চলে আসতো। দুনিয়ায় মানুষ পাঠানোর উদ্দেশ্য নষ্ট হতো --
রাসূল (দ:) কে গাছ উত্তর দিলো --
গাছ কিভাবে রাসূল (দ:) এর কথা শুনলো ও উত্তর দিলো সে নিয়ে অনেক হাদীস রয়েছে। যেমন, এক লজ্জাবতী গাছ রাসুল (দ:) এর কথায় সাড়া দিয়ে বলে উঠে-- আল্লাহ এক, মুহাম্মাদ (দ:) তাঁর রাসুল ।
ইবনে উমর বলেন আমরা রাসূল (দ:) এর সাথে এক সফরে ছিলাম। এক বেদুইন রাসুল (দ:) কে দেখে কাছে আসলে তিনি জানতে চান : বেদুইন, তুমি কোথায় যাচ্ছো ?
লোকটি বলে : আমার পরিবারের কাছে। রাসুল (দ:) বললেন, তুমি কি ভাল কিছু চাও ? বেদুইন জানতে চাইলো – সেটা কী?
রাসুল (দ:) বললেন : তা হলো এই তুমি এই সাক্ষ্য দাও যে কোন মাবুদ নেই আল্লাহ ছাড়া যার কোন শরীক নেই ও মুহাম্মাদ (দ:) আল্লাহর দাস ও রাসুল।
বেদুইন বললো , আপনি যে সত্য বলছেন তার সাক্ষ্য কে দেবে? রাসুল (দ: ) তখন বললেন ঐ লজ্জাবতী গাছটি সাক্ষ্য দেবে। গাছটি তখন নদীর তীর থেকে এগিয়ে আসতে লাগলো যতক্ষণ না রাসুল (দ:) এর একদম সামনে আসলো।
রাসুল (দ:) গাছকে বললেন তিনবার সাক্ষ্য দিতে ও গাছটি ঠিক তাই করলো তারপর নিজ জায়গায় ফিরে গেল (আদ দারিসী আল বায়হাকী ও আল বাযযার)।
এমন কী, জড় পদার্থ পাথরও রাসুল (দ:) কে অভিবাদন জানায় ও সাক্ষ্য দেয় যখন তিনি তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মুযেজা:
আলী ও অন্যরা বলেন : রাসুল (দ:) এর সাথে মক্কার সীমান্তে আমি হাঁটছিলাম আমি দেখলাম রাসুল (দ:) যখন পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন সব গাছ ও পাথরই বলছিলো, আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক্, হে আল্লাহর রাসুল (দ:) ( আল তিরমিযী)।
আল্লাহর অনুমতিতে গাছ সরে যায় রাসূল (দ:) এর সুবিধার জন্য। এ ধরণের অনেক ঘটনার মধ্যে একটি হলো - ইবনে ফারুক জানান যে তায়েফে সামরিক অভিযানের সময় রাসুল (দ:) রাতে সফর করছিলেন ও একসময় অন্যমনস্ক হয়ে পড়েন।
তখন তার চলার পথে পড়া একটি লট গাছ দুই ভাগ হয়ে যায় ও রাসুল (দ:) ঐ গাছের ফাঁক দিয়ে চলে যান। গাছটি দুই ভাগ অবস্থায় সারাদিন ছিল । এটা অনেকেই জানে -
খেজুর গাছটির আর দরকার থাকলো না তখন গাছটি কষ্টে আর্তনাদ করতে থাকে ও রাসূল (দ:) এর প্রতি ভালবাসায় কাঁদতে থাকে।
জাবীর ইবনে আবদুল্লাহ বলেন: মসজিদ বানানো হয়েছিল অনেকগুলি খেজুর গাছের গুঁড়ি দিয়ে। মসজিদে আসা মানুষদের সাথে কথা বলার সময় এই গুড়িগুলির একটির উপর রাসুল (দ:) ভর দিতেন।
যখন রাসুল (দ:) এর জন্য মিম্বর তৈরী হলো, তখন আমরা শুনলাম গুঁড়িটি আওয়াজ করছে ঠিক যেন উটের মতো (বুখারী )--
অফুরন্ত পানি ও খাবার:
আল্লাহ তাঁর রাসুল (দ:) কে সারা জীবন ধরেই নানাভাবে রহমত দান করেছেন । রাসুল (দ:) স্পর্শ করেছেন বা দোয়া করেছেন এমন কিছুতে আল্লাহর রহমতে বরকত বাড়তো।
হাদীসে এমন ঘটনার কথা বলা আছে। যখন দেখা যাচ্ছিলো পানি ও খাবার খুবই কম, তখন রাসুল (দ:) এর উপস্থিতিতে অফুরন্ত পানি ও খাবার পাওয়া যায়।
এশবার পানি এত কম ছিল যে সাহাবীরা ওজুও করতে পারছিলেন না। রাসুল (দ:) কে আল্লাহ মুযেজা দান করলেন। ফলে সেই পানিতেই অসংখ্য মানুষ ওজু করলেন।
আনাস ইবনে মালিক বলেন: আসরের নামাজের সময় আমি রাসুল (দ: ) কে দেখলাম। ঐ সময় মানুষ ওজুর জন্য পানি চাচ্ছিলো কিন্তু কোথাও পানি খুঁজে পেল না। তখন আল্লাহর রাসূল (দ:) নিজের হাত সামান্য পানির পাত্রে রাখলেন।
এরপর তিনি সবাইকে বললেন ঐ পাত্র থেকে পানি নিয়ে ওজু করতে। আনাস আরো বলেন আমি দেখলাম রাসূল (দ:) এর আঙুল থেকে পানি বের হচ্ছে আর সবাই একে একে ওজু করলো। ( মুসলিম বুখারী)
সহীহ হাদীসে অন্য একটি ঘটনার কথা আছে। আল হুদায়বিদায় ওজুর পানি পাওয়া যাচ্ছিলো না। রাসুল (দ:) তখন পানির পাত্রে আঙুল ঢুকান। এরপর পনেরো হাজার লোক সেই পানি দিয়ে ওজু করে। (বর্ণনাকারী : জাবীর ইবনে আবদুল্লাহ)
রাসুল (দ:) এর দুই আঙুলের মধ্য দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ার আরো কিছু ঘটনা জানা যায়।
ইবনে আব্বাস বলেন: এক সফরে মুসলিম বাহিনীর জন্য কোন পানি ছিল না । সকালে রাসূল (দ:) কে একজন বললো, হে আল্লাহর রাসূল (দ:) সেনাদলের কাছে কোন পানি নেই।
রাসুল (দ:) তখন জানতে চাইলেন “ অল্প একটু পানিও কি হবে না ? ” হ্যাঁ। একটি পাত্রে তখনই অল্প পানি আনা হলো। রাসুল (দ:) পাত্রের মুখে আঙুল প্রসারিত করলেন । পানি তাঁর আঙুল থেকে ঝর্ণার মতো প্রবাহিত হতে থাকলো।
রাসূল (দ:) বেলালকে আদেশ দিলেন সবাইকে ডাকার জন্য -- বরকতময় পানির কাছে আসো ( ইবনে হাম্বলে আল বায়হাকী, বাযযার আত- তাবারানী ও আবু নায়ীম)
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মুযেজা:
যিয়াদ ইবনে আল হারিখ আস সুদাই বলেন - রাসুল (দ:) সফরে ছিলেন। সকাল হওয়ার আগে তিনি থামলেন । তিনি আমাকে প্রশ্ন করলেন, হে সুদা গোষ্ঠির ভাই, পানি কি আছে ?
আমি বললাম খুব অল্প পানি যা আপনার জন্য যথেষ্ট হবে না। তিনি আদেশ করলেন একটি পাত্রে পানি ঢেলে আমার কাছে আনো। আমি পানি আনলাম। রাসুল (দ:) তাঁর হাত পানিতে রাখলেন।
আমি দেখলাম দুই আঙুলের মধ্য দিয়ে ঝর্ণার মতো পানি বের হচ্ছে। রাসুল (দ:) তখন আদেশ দিলেন : যে সব সাহাবীদের পানির দরকার, তাদেরকে ডাকো। আমি ডাকলাম । যার যত পানি দরকার ছিল, তা সে নিতে পারলো।
আমরা বললাম হে আল্লাহর রাসুল (দ:)। আমাদের একটি কূপ আছে। শীতে সেখানে যথেষ্ট পানি থাকে, কিন্তু গরমের সময় আমরা কূপ থেকে পানি পাই না---
পানির খোঁজে অন্য কোথাও যেতে হয়। আমরা এখন মুসলমান হয়েছি। আমাদের চারপাশে শত্রু। আপনি দয়া করে আমাদের প্রভুর কাছে প্রার্থনা করুন যাতে এই কুপের পানি বেড়ে যায়।
তাহলে আমাদেরকে আর পানির জন্য দুরে ঘোরাফেরা করতে হবে না। এই কুপের কাছেই আমরা তাহলে সবসময় থাকতে পারবো। ”
রাসূল (দ:) সাতটি পাথর আনার জন্য বললেন তিনি হাতের মধ্যে পাথরের টুকরোগুলি ঘষলেন ও দোয়া করলেন। তারপর আদেশ দিলেন: এই পাথরগুলি নিয়ে যাও। কুপের মধ্যে আল্লাহর নাম নিয়ে এক এক করে পাথরগুলি ফেলে দাও । ”
আমরা তাই করলাম । এরপর আর কখনো আমরা কূপের নীচ দেখতে পারি নি (অর্থাৎ কূপ কখনো শুকিয়ে যায় নি সবসময় তাতে পানি থাকতো।) ---
(আল হারিথ ইবনে উসামাহ -- মুসনাদ গ্রন্থ ; আল বায়হাকী ও আবু নায়ীম)
আরেকটি হাদীসে আছে রাসূল (দ:) পা দিয়ে আঘাত করার পর ঐ জায়গা থেকে প্রচুর পানি বের হয়।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মুযেজা:
আমর ইবনে শুয়াইব জানান, একবার রাসুল (দ:) এর যাচ্ছিলেন। তখন আবু তালিব বললেন পিপাসা পেয়েছে কিন্তু আমার কাছে কোন পানি সাথে তিনি নেই।
রাসুল (দ:) তখন মাটিতে পা দিয়ে আঘাত করলেন। মাটির নীচ থেকে পানি বের হতে থাকলো রাসুল (দ:) বললেন পান করো।
একইভাবে সাহাবীরাও বলেছেন যে রাসুল (দ:) এর উপস্থিতিতে কখনোই পানি ও খাবার কম পড়তো না ও সবাই পেট ভরে খেতে পারতো।
আনাস একটি ঘটনা বর্ণনা করেন: “ রাসুল (দ:) এর বিয়ের পর আমার আম্মা রাসুল (দ:) ও তাঁর স্ত্রীর জন্য কয়েকটি খেজুর ও অল্প কিছু মাখন দিয়ে খাবার তৈরী করেন । আমি সেটা একটি পাত্রে করে নিয়ে যাই।
রাসুল (দ:) বলেন: এটা নীচে রাখো ও অমুক অমুককে ও যার সাথে দেখা হয় তাকেই ডাকো।
আমি সবাইকে দাওয়াত দিলাম ও সুফফাহ (মসজিদে নব্বী সংলগ্ন বারান্দা যেখানে গরীব মুসলমানরা ঘুমাতো) কামরা ভর্তি না হওয়া পর্যন্ত কাউকেই ডাকতে বাদ দিলাম না।
রাসুল (দ:) নিজের সামনে পাত্রটি এনে তিনটি আঙুল খাবারের মধ্যে রাখলেন। মানুষ এসে খাওয়া শুরু করলো ও চলে গেল। পাত্রটি সেরকমই ভরা থাকলো যেমনটি প্রথমে ছিল। মানুষ ছিল ৭১ বা ৭২ জন (মুসলিম ও বুখারী ) -
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মুযেজা:
একবার আবু আইউব শুধুমাত্র রাসুল (দ:) ও আবু বকর (রা: ) খেতে পারবেন এই - পরিমাণ খাবার বানান। তিনি পরে বলেন, রাসুল (দ:) তাকে আনসারদের মধ্য থেকে ত্রিশজনকে দাওয়াত দিতে বলেন।
ঐ ত্রিশজন এসে খেয়ে চলে যাওয়ার পর রাসুল (দ:) বললেন আরো ষাটজনকে ডাকো। তারাও খেয়ে চলে যাওয়ার পর রাসুল (দ:) বললেন আরো ৭০ জনকে ডাকো। এরপর তারা খাওয়ার পরেও বেশ কিছু খাবার রয়ে গেল ।
রাসুল (দ:) কে সম্মান প্রদর্শণ ও মুসলমান না হয়ে এরা কেউ-ই চলে যায় নি। আবু আইউব বলেন, মোট ১৮০ জন ঐ খাবার খেয়েছিল ( আল তাবারাণী ও আল বায়হাকী )
আবু হুরায়রা আরেকটি ঘটনা জানান মসজিদে যত মানুষ ছিল সবাইকে রাসুল (দ: ) দাওয়াত দিতে বললেন। তিনি সবাইকে জড়ো করলেন ও একটি পাত্র রাখলেন সবার সামনে।
সবাই পেট ভরে খেয়ে চলে গেল । পাত্রে খাবার একই রকম রয়ে গেল শুধু তার মধ্যে আঙুলের দাগ দেখা যাচ্ছিলো।
এসব উদাহরণ হলো অল্প কিছু মুযেজা যা আল্লাহ তাঁর রাসুল (দ:) কে দান করেন। রাসুল (দ:) এর জীবনে এমন কোন দিক নেই যা মুযেজা ছাড়া।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মুযেজা:
একেবারে অসাধারণ তবুও অস্বীকার করার উপায় নেই এমন মুযেজা যেমন আকাশে ভ্রমণ চাঁদ ভাগ করা ইত্যাদি থেকে শুরু করে প্রায় সময়ই সংঘটিত মুযেজা যেমন গাছের সালাম জানানো ইত্যাদি ঘটেছে রাসুল (দ:) এর জীবনে।
এসব মুযেজা আল্লাহর বাণীকে প্রতিষ্ঠিত করা, বিশ্বাসীদের ঈমান দৃঢ় করা ও কাফিরদের সত্য গ্রহণে দাওয়াত দেয় । অবশ্য আল্লাহ মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছা দান করেছেন । তাই মুযেজা দেখার পরেও সবাই তাতে বিশ্বাস আনে নি।
রাসুল (দ:) কখনোই দাবী করেন নি যে মুখেজা প্রদর্শনের ক্ষমতা তাঁর আছে। এসব আল্লাহর হুকুমে হয়েছে। রাসুল (দ:) ছিলেন একজন বরকতময় মানুষ। তাঁর উপস্থিতিতে এত বরকত ছিল যে পানি ও খাবারের প্রাচুর্য দেখা দিতো।
রাসুল (দ:) দোয়া করতেন তাতেও অনেক বরকত থাকতো। মানুষের জন্য যে দোয়া করতেন তাতেও অনেক বরকত থাকতো।
Keyword: হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মুযেজা, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মুযেজা, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মুযেজা, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মুযেজা, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মুযেজা, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মুযেজা,