ভাব ও কাজ - অষ্টম শ্রেণি - সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (PDF) | Vab O Kaj : Creative Questions and Answers - Class 8
ভাব ও কাজ অষ্টম শ্রেণি |
ভাব ও কাজ অষ্টম শ্রেণি
প্রশ্ন -০১ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
তুমি স্বপ্নে রাজা হতে পার, কোটি কোটি টাকা, বাড়ি-গাড়ির মালিক হতে পার। কল্পলোকের সুন্দর গল্পও
হতে পার, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন
এক জগৎ। এখানে বড় হতে হলে পরিশ্রমের বিকল্প নেই। শিক্ষার দ্বারা নিজের সুপ্ত প্রতিভাকে
জাগ্রত করে সঠিক কর্মানুশীলনের মাধ্যমে বড় হতে হবে। সুতরাং কল্পনার জগতে হাবু-ডুবু
না খেয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মনিয়োগ করাই মনুষ্যত্বের পরিচায়ক।
(ক)যিনি ভাবের বাঁশি বাজিয়ে জনসাধারণকে নাচাবেন তাকে
কেমন হতে হবে? ১
(খ)লেখক ‘স্পিরিট’ বা আত্মার শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে
বলেছেন কেন? ২
(গ)উদ্দীপকটি ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের যে দিকটি নির্দেশক
করে তা বর্ণনা কর। ৩
(ঘ)‘কল্পনার জগতে হাবু-ডুবু না খেয়ে দেশ ও জাতির
কল্যাণে আত্মনিয়োগ করাই মনুষ্যত্বের পরিচায়ক’- মন্তব্যটি ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের আলোকে মূল্যায়ন
কর। ৪
অনুশীলনীর ১নং প্রশ্নের উত্তর :
(ক) যিনি ভাবের বাঁশি বাজিয়ে জনসাধারণকে নাচাবেন তাকে
নিঃস্বার্থ ত্যাগী ঋষি হতে হবে।
(খ) কর্মে শক্তি আনার জন্য লেখক ‘স্পিরিট’ বা আত্মার শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে বলেছেন।
কর্মের মাধ্যমে সফলতা মানব জীবনকে সুন্দর ও সার্থক
করে। এক্ষেত্রে কর্ম-পরিকল্পনা সঠিক ও নিয়ন্ত্রিত হতে হবে। তার জন্য কর্মশক্তি এবং
সঠিক উদ্যোগের দরকার হয়। ভাবের দ্বারা মানুষ এগিয়ে গেলেও কর্মে শক্তি আনার জন্য আত্মার
শক্তিকে জাগিয়ে তোলা অপরিহার্য।
(গ) উদ্দীপকটি ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে বর্ণিত ভাবের
সঙ্গে পরিকল্পিত কর্মশক্তি ও বাস্তব উদ্যোগের প্রয়োজনীয় দিকটি নির্দেশ করে।
ভাব ও কাজের পার্থক্য অনেক। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার
জন্য ভাবের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু ভাব দিয়ে মহৎ কিছু অর্জন করা যায় না। তার জন্য
কর্মশক্তি এবং সঠিক উদ্যোগের দরকার। ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে কাজী নজরুল ইসলাম ভাব ও যথাযথ
কাজের সমন্বয়কে বিশ্লেষণ করেছেন।
উদ্দীপকটিতে ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের ন্যায় ভাবের
সাথে কর্মশক্তি এবং সঠিক উদ্যোগের দিকটি তুলে ধরা হয়েছে। শুধু চিন্তা, কল্পনা বা ভাবের দ্বারা কোনো কিছু অর্জন করা যায়
না। বাস্তবতার আসল রূপ হলো পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষার দ্বারা নিজের সুপ্ত
প্রতিভাকে জাগ্রত করে সঠিক কর্মানুশীলনের মাধ্যমে বড় হতে হবে। তাই উদ্দীপকের সাথে প্রবন্ধের
সামগ্রিকতা মিলে যায়।
(ঘ) জীবনকে কল্পনার জগতে সীমাবদ্ধ না রেখে দেশ ও জাতির
কল্যাণে আত্মনিয়োগ করাই মনুষ্যত্বের পরিচায়ক।
ব্যক্তিজীবনকে সঠিক ও সুন্দরভাবে পরিচালিত করলে
ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য উজ্জ্বল হওয়ার পাশাপাশি দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মনিয়োগ করা যায়।
উদ্দীপকে কল্পনা ও ভাবের স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে।
স্বপ্নলোকে মানুষ জীবনকে রঙিনভাবে সাজাতে পারে, জীবন সোনার রূপকাঠি দিয়ে কল্পনার জগতে রাজা হতে
পারে। প্রকৃতপক্ষে কল্পনার জগত ও বাস্তবতার দুনিয়া কখনো এক নয়। চরম বাস্তবতার প্রতিটি
মুহূর্তে জীবনকে এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে দেশের স্বার্থে কাজে লাগে।
‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে কল্পনাকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়নি।
ভাব ও কল্পনার গুরুত্ব আছে কিন্তু কল্পনা দিয়ে মহৎ কিছু অর্জন করা যায় না। তার জন্য
কর্মশক্তি এবং সঠিক উদ্যোগের দরকার হয়। কল্পনার দ্বারা মানুষকে জাগিয়ে তোলা যায় কিন্তু
যথাযথ পরিকল্পনা ও কাজের স্পৃহা ছাড়া দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মনিয়োগ করা যায় না। আর
সঠিক উদ্যমের মাধ্যমে দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মনিয়োগ করার মধ্যেই মনুষ্যত্বের আসল পরিচয়
নিহিত। তাই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যৌক্তিক।
প্রশ্ন -০২ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
সমাজে এমন অনেক মানুষদের আমরা দেখি যারা কাজের চেয়ে
কথা বলেন বেশি। এরা কারণে অকারণে কথা বলেন। নিজে যা না তার চেয়ে বেশি বলেন। ফলে তাদের
কথার মধ্যে প্রচুর মিথ্যা কথা চলে আসে। অনেকের ভাব ভঙ্গি দেখে ও চলনে-বলনে মনে হয় এরা
সবজান্তা, আসলে এরা মূর্খের
অধম।
(ক)কাজ জিনিসটা কাকে রূপ দেয়? ১
(খ)মানুষকে জাগিয়ে তুলতে হলে তার কোমল জায়গায় ছোঁয়া
দেওয়া প্রয়োজন কেন? ২
(গ)উদ্দীপকের সাথে ভাব ও কাজ প্রবন্ধের সাদৃশ্য ব্যাখ্যা
কর। ৩
(ঘ)অনেকের ভাব ভঙ্গি, দেখে ও চলনে- বলনে মনে হয়- এরা সবজান্তা। আসলে এরা
মূর্খের অধম- কথাটি উদ্দীপক এবং ভাব ও কাজ প্রবন্ধের আলোকে বিশ্লেষণ কর। ৪
উত্তর
(ক) কাজ জিনিসটা ভাবকে রূপ দেয়।
(খ) কোমল (হৃদয়) জায়গায় স্পর্শ করতে হবে তাহলেই মানুষ
দ্রুত জেগে ওঠে এবং তাকে দিয়ে অধিক কাজ করানো যায়।
মানুষকে জাগিয়ে তুলতে হলে তার কোমল জায়গায় ছোঁয়া
দেয়া প্রয়োজন। কোমল জায়গায় ছোঁয়া দিয়ে তাকে জাগিয়ে তুলতে না পারলে তার দ্বারা কোনো
কাজ করানো যায় না। আমাদের এই ভাব পাগল দেশে এটি খুবই অপরিহার্য।
(গ) উদ্দীপকের বক্তব্যের সাথে ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের
সাদৃশ্য রয়েছে।
‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে বলা হয়েছে জনগণের বৃহত্তর কল্যাণের
জন্য তাদের মধ্যে ভাব বা অনুভ‚তি জাগিয়ে তুলতে হবে। যিনি এই ভাব বা অনুভ‚তির সঞ্চার
করবেন তাকে অবশ্যই নিঃস্বার্থ ত্যাগী ঋষি হতে হবে। জনগণের এই জাগরণকে সততার সাথে পরিচালন
করতে হবে। সাময়িক উত্তেজনার মুখে ত্যাগের অভিনয় করলে জনগণের ‘স্পিরিট’ বা আত্মার শক্তি
পবিত্রতা নষ্ট হবে। লেখক বলেছেন সাপ নিয়ে খেলতে চাইলে দুস্তুর মতো সাপুড়ে হতে হবে।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে সমাজে এমন মানুষ আছেন যারা কাজের
চেয়ে কথা বেশি বলেন। যারা কারণে অকারণে কথা বলেন। নিজে যা না তার চেয়ে বেশি বলেন। এরা
প্রচুর মিথ্যে বলেন। নিজেদের সবজান্তা ভাবলেও এরা মূর্খ। আসলে এদের সততা বা সাধুতা
নেই। প্রবন্ধে বলা হয়েছে যারা সমাজকে জাগিয়ে তুলবেন তাদের আবশ্যই ত্যাগী ঋষি হতে হবে।
তাই উদ্দীপকের বক্তব্যের সাথে ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের সাদৃশ্য রয়েছে।
(ঘ) অনেকের ভাব-ভঙ্গি দেখে ও চলনে-বলনে মনে হয়- এরা
সবজান্তা। আসলে এরা মূর্খের অধম। উদ্দীপকের এই কথার সমর্থন মেলে ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে।
‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে পাই, মাথার ঘাম পায়ে ফেলা বহু মানুষের সম্পদ দেশের নামে,
কল্যাণের নামে বাজে লোকেরা
নিজেদের উদরপূর্ণ করে। এদের কারচুপিতে ঢাকা পড়ে যায় সত্যিকার দেশকর্মী। মুখোশপরা ওই
মানুষগুলো সত্যিকার দেশপ্রেমিকদের খেলো, ঝুটা প্রমাণ করে দেয়। এরা এদের মিথ্যাচার দিয়ে ঐ সত্যিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে সাধারণ
মানুষকে বিষিয়ে তোলে।
উদ্দীপকে সমাজের অসৎ চাপাবাজদের কথা বলা হয়েছে।
যারা কারণে অকারণে বেশি কথা বলে, কাজের চেয়ে কথা বেশি
বলে। ফলে প্রচুর মিথ্যে কথাও চলে আসে তাদের মুখে। তাদের চলনে-বলনে সবজান্তা মনে হলেও
এরা মূর্খ।
‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে যে অসৎ ও মুখোশপরা শ্রেণির
কথা বলা হয়েছে। এরা দেশপ্রেমিক সেজে মানুষের সাথে প্রতারণা করে আর উদ্দীপকে চাপাবাজ
ও মিথ্যাবাদী শ্রেণি সমাজে ভাঙন ও বিপর্যয় সৃষ্টি করে। এরা দেশ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর।
এরা নিজেদের যতই সজ্জন ও মহাপুরুষ দাবি করেন না কেন লেখকের ভাষায় এরা ভাবের ঘরে চুরি
করে।
প্রশ্ন -০৩ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ছাত্রসমাজ শক্তি, ন্যায় ও নতুনত্বের প্রতীক। ছাত্রসমাজকে তাদের সততা
ও দক্ষতা দিয়ে যেকোনো কাজে নামালে সে কাজ সফল হয়। আমাদের দেশে অতীতেও এমন ঘটেছে। কিন্তু
ছাত্রসমাজের ক্ষমতাকে বিনা কারণে বিপথে ব্যবহার করলে সমাজের বিশেষ উন্নয়ন হয় না। তাই,
ছাত্রসমাজকে সঠিক পথে চালাতে
হলে চাই প্রাণশক্তিতে ভরপুর নেতৃত্ব।
(ক)‘সাম্যবাদী’ কার রচিত কাব্যগ্রন্থ?১
(খ)হঠকারিতার ফলে সৃষ্ট অনুশোচনা ছাত্ররা কেন মন
থেকে মুছে ফেলতে পারবে না?২
(গ)উদ্দীপকে ছাত্রসমাজের যে বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে তার সাথে ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে ছাত্রসমাজের বৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।৩
(ঘ)‘ছাত্রসমাজকে সঠিক পথে চালাতে হলে চাই প্রাণশক্তিতে
ভরপুর নেতৃত্ব।’- উদ্দীপকের এ কথাটি ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের চেতনারই প্রতিভ‚- বিশ্লেষণ
কর।৪
উত্তর
(ক) ‘সাম্যবাদী’ কাজী নজরুল ইসলাম রচিত কাব্যগ্রন্থ।
(খ) হুজুগে মেতে হঠকারিতার ফলে সৃষ্ট অনুশোচনা ছাত্ররা
মন থেকে মুছে ফেলতে পারবে না।
সৎ সংকল্প ও মহৎ ত্যাগকে স্থায়ীরূপে বরণ করতে না
পারলে তা অকল্যাণই ডেকে আনে। ছাত্রসমাজ সাময়িক উত্তেজনার বশে অনেক সময় হঠকারী কর্মকান্ড
করে বসে। এই হঠকারিতার ফলে সৃষ্ট গ্লানি ও অনুশোচনা তারা
ভুলতে পারে না।
(গ) উদ্দীপকের ছাত্রসমাজের বৈশিষ্ট্যের সাথে ‘ভাব
ও কাজ’ প্রবন্ধের ছাত্রসমাজের বৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্য রয়েছে।
‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে লেখক ছাত্রদের স্পিরিট বা আত্মার
শক্তির পবিত্রতা নষ্ট হওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে আলোচনা করেছেন। ছাত্রসমাজ বা যুবসমাজই
জাতির প্রাণশক্তি। জাতির আশা ভরসার কেন্দ্রস্থল যুবকরা যদি নৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে
তবে মুখোশধারী তথাকথিত ত্যাগী ব্যক্তিরা তাদের কাপুরুষের মতো ব্যবহার করে থাকে। ফলে
সত্যিকার সত্যের ডাক এলেও সেদিন তারা সাড়া দিতে পারে না।
উদ্দীপকে ছাত্রসমাজের গুরুত্বকে তুলে ধরা হয়েছে।
তারা শক্তি, ন্যায় ও নতুনত্বের
প্রতীক। ছাত্রসমাজকে সততা দক্ষতা দিয়ে কোনো কাজে নামলে তা সফল হয়। অতীতেও ছাত্রসমাজ
বড় বড় কাজ করেছে। ছাত্রসমাজের ক্ষমতাকে বিনা কারণে বিপথে ব্যবহার করলে তা সমাজের কোনো
উন্নয়ন বয়ে আনে না।
সাময়িক উত্তেজনার বশে হঠকারী কর্মকান্ডে তাদের জড়িত
হলে চলবে না। সেটা করলে তাদের ভেতরের স্পিরিট বা আত্মার শক্তি নষ্ট হবে। তাই উদ্দীপক
ও প্রবন্ধ উভয় ক্ষেত্রে ছাত্রসমাজের এরূপ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
(ঘ) ‘ছাত্রসমাজকে সঠিক পথে চালাতে হলে চাই প্রাণশক্তিতে
ভরপুর নেতৃত্ব’ উদ্দীপকের উক্তিটি ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের চেতনার প্রতিভ‚।
‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে সমাজসচেতন লেখক কাজী নজরুল
ইসলাম দেশের প্রাণশক্তি তরুণদের ভ‚মিকার বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। তারা অনেক সময় ভাবের
বশবর্তী হয়ে হঠকারী কর্মকান্ড করে ফেলে। যার প্রায়শ্চিত্ত তারা নিজেরাই করে। হুড়মুড়
করে হুজুগে মেতে তারা যে কাজটা করে তাদের সে ত্যাগ স্থায়ী কোনো ফলাফল বয়ে আনে না। লেখকের
মতে, জাতির প্রাণশক্তি তরুণদের
পরিচালনার জন্য ত্যাগী নিঃস্বার্থ নেতৃত্ব প্রয়োজন।
উদ্দীপকেও ছাত্রসমাজকে শান্তি ও ন্যায়ের প্রতীক
বলা হয়েছে। সততা, দক্ষতা দিয়ে তাদের
কোনো কাজে নামালে সেকাজ সফল হয়। অতীতে ছাত্রসমাজ সেই সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে। ছাত্রসমাজের
ক্ষমতাকে বিনা কারণে ব্যবহার করলে তা জাতির জন্য কোনো মঙ্গল বয়ে আনে না। তা বিড়ম্বনা
সৃষ্টি করে। তাদের পরিচালনার জন্য প্রয়োজন প্রাণশক্তিতে ভরপুর নেতৃত্ব।
উদ্দীপক এবং ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধ বিবেচনা করলে দেখা
যায়, উদ্দীপকের মন্তব্য ও লেখকের
মতামত একই সত্যকে ধারণ করে। উদ্দীপকে যুবসমাজকে পরিচালনার জন্য প্রাণশক্তি সম্পন্ন
নেতৃত্বের কথা বলা হয়েছে। প্রবন্ধে বলা হয়েছে নিঃস্বার্থ ত্যাগী ঋষির কথা। যারা যুবসমাজ
ও ছাত্রসমাজকে সঠিক পথে পরিচালনা করবে।
প্রশ্ন -০৪ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
বিষ্ণুপুর গ্রামে করিম নামে এক নেতা গোছের লোক আছে।
তিনি সবসময় দলবল নিয়ে চলেন। এই করিম যেকোনো ছলছুতায় মানুষের কাছ থেকে চাঁদা ওঠায়। তার
দল কখনো উন্নয়নের কথা বলে, কখনো সমাজ সেবার কথা
বলে, কখনো দুর্যোগে সহায়তার কথা
বলে। আসলে এরা কখনো অন্যের উপকার করে না। নিজের স্বার্থ হাসিল করে। এদের উৎপাতে সত্যিকার
ত্যাগী মানুষগুলো কোনো কাজই করতে পারে না। এদের মতো ত্যাগী মানুষের চাইতে বেশি প্রয়োজন
সত্যিকার কর্মী।
(ক) কবি কাজী নজরুল ইসলাম কোথায় মৃত্যুবরণ করেন?১
(খ) ‘দশচক্রে ভগবান ভ‚ত’- কথাটি দিয়ে কী বোঝানো হয়েছে?২
(গ) উদ্দীপকের করিমের সাথে ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের তথাকথিত কর্মী নামে অভিহিত লোকদের সাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।৩
(ঘ) ‘ত্যাগী মানুষের চাইতে বেশি প্রয়োজন সত্যিকার কর্মী।’ -‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের আলোকে উক্তিটি সম্পর্কে তোমার মতামত দাও। ৪
উত্তর
(ক) কাজী নজরুূল ইসলাম ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
(খ) ‘দশচক্রে ভগবান ভ‚ত’ বলতে দশজনের চক্রান্তে সাধুও
অসাধু প্রতিপন্ন হতে পারে- সে কথাই বোঝানো হয়েছে।
যখন কোনো বিষয়ে বহুলোক ষড়যন্ত্র করে তখন অসম্ভবও
সম্ভব হয়ে যায়। দশজন যখন মিথ্যাচার করে তখন মিথ্যাটাই সত্যের মতো প্রচারিত হতে থাকে।
তখন দশজনের চক্রান্ত সাধুও অসাধু ব্যক্তিতে প্রতিপন্ন হতে পারে।
(গ) ত্যাগ স্বীকারে অনভ্যস্ত উদ্দীপকের করিমের সাথে
‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের তথাকথিত কর্মীর মধ্যে মিল বা সাদৃশ্য রয়েছে।
‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে লেখক মত দিয়েছেন, দেশ ও জাতি গঠনে সত্যিকার কর্মীর প্রয়োজন। সাপ খেলতে
গেলে যেমন সামান্য বাঁশি বাজালেই চলে না। তাকে দস্তুরমতো সাপুড়ে হতে হয়। দেশে যদি সত্যিকার
কর্মী থাকত তবে কোনো সুবর্ণ সুযোগই মাঠে মারা যেত না। দেশে অনেক ত্যাগী মানুষ আছেন।
কিন্তু তারা তথাকথিত কর্মী নামে অভিহিত লোকদের সত্য সাধনার অভাবে তাঁরা কোনো ভালো কাজে
অর্থ ব্যয় করতে চান না। কোনো ত্যাগ স্বীকারেও রাজি হন না।
উদ্দীপকের করিম নেতা গোছের লোক। যেকোনো ছলছুতায়
মানুষের কাছ থেকে চাঁদা ওঠায় দলবল নিয়ে। উন্নয়ন, সেবা ও সহায়তার কথা বললেও কারো কোনো উপকার করে না।
নিজের স্বার্থই শুধু হাসিল করে। এদের উৎপাতে ত্যাগী মানুষেরা কোনো কাজই করতে পারে না।
‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের লোক দেখানো তথাকথিত কর্মীর সাথে তাই উদ্দীপকের করিমের সাদৃশ্য
রয়েছে।
(ঘ) আলোচ্য উদ্দীপক ও ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে সত্যিকার
কর্মীর প্রয়োজনীয়তার কথাই মুখ্য হয়ে উঠেছে।
‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে সমাজ সচেতন লেখক কাজী নজরুল
ইসলাম একটি সমৃদ্ধ দেশ, সমৃদ্ধ জাতি গঠনে
জনগণের মাঝে প্রকৃত ভাব সৃষ্টি ও কর্তব্য কাজের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তার মতে,
যারা জনগণের মাঝে ভাবের বাঁশি
বাজিয়ে জাগরণ সৃষ্টি করতে চান তাঁদের নিঃস্বার্থ ত্যাগী ঋষি হতে হবে। হঠকারী কর্মকান্ডের
জন্য অনেক ক্ষতি সাধিত হয়। দরকার সঠিক নেতৃত্ব। আত্মার শক্তিকে জাগিয়ে তুলে সত্যিকার
কর্মী হিসেবে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। সেক্ষেত্রে তিনি যুবকদের প্রতি বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ
করেছেন। উদ্দীপকের করিম জনগণের উন্নয়ন ও সেবার কথা বলে নিজের আখের গোছায়। অর্থনৈতিক
ফায়দা লাভ করে। সে ও তার দলবলের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ। তাদের উৎপাতে সত্যিকার ত্যাগী
ও কর্মী মানুষ ভালো কোনো কাজই করতে পারে না। অথচ এই ত্যাগী ও সত্যিকার কর্মী মানুষের
সমাজে বেশি প্রয়োজন।
উদ্দীপক ও ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধ থেকে আমরা জানতে
পারি সত্যিকার কল্যাণের জন্য প্রয়োজন সত্যিকার কর্মী। যারা নিস্বার্থভাবে সমাজের কল্যাণ
করবে। ব্যক্তিস্বার্থকে কখনো প্রাধান্য দেবে না।
প্রশ্ন -০৫ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
মানুষ বড় হয় তার কর্মের মাধ্যমে। সঠিক কর্মের মাধ্যমে
মানুষ কাক্সিক্ষত সাফল্য লাভ করতে পারে। কর্ম ও নিজস্ব চিন্তা মানুষকে সঠিক পথে পরিচালনা
করে। তাই চিন্তা যদি পরিচ্ছন্ন না হয়; তবে মানুষকে ভাবের সাগরে হাবুডুবু খেতে হয়। যা তাকে প্রকৃত মানুষ হওয়া থেকে বিরত
রাখে।
(ক) হুজুগ কী? ১
(খ) লোকের কোমল জায়গায় স্পর্শ করে কার্যসিদ্ধি বলতে
কী বোঝানো হয়েছে? ২
(গ) উদ্দীপকে ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের কোন দিকটি বর্ণিত
হয়েছে? ব্যাখ্যা কর। ৩
(ঘ) “চিন্তা যদি পরিচ্ছন্ন না হয়; তবে মানুষকে ভাবের সাগরে হাবুডুবু খেতে হয়”- কথাটি
উদ্দীপক এবং ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের আলোকে বিশ্লেষণ কর। ৪
উত্তর
(ক) লক্ষ নির্ধারণ না করে সাময়িক কোনো আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়া গুজবকে হুজুগ বলে।
(খ) লোকের কোমল জায়গায় স্পর্শ করে কার্যসিদ্ধি করা
বলতে বোঝায়নো হয়েছে- মানুষকে উদ্দীপ্ত করে তার চেতনা পরিবর্তনের মাধ্যমে সফলতা সৃষ্টি
করা ।
প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব একটা অনুভব আছে। তার নিজস্ব
একটা চিন্তা ও চেতনা আছে। ব্যক্তির চিন্তার জায়গাটা তার নিজস্ব একটি কোমল জায়গা। মানুষ
কোমল জায়গায় অর্থাৎ তার অনুভ‚তিকে জাগিয়ে তার মাধ্যমে কঠিন কাজও সহজে করা যায়।
(গ) উদ্দীপকে ভাব ও কাজ প্রবন্ধে উল্লিখিত সঠিক কর্ম
ও চিন্তার মধ্যদিয়ে সাফল্য লাভের বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে।
‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে লেখক মানুষের মাঝে ভাবের জাগরণ
ঘটিয়ে মহৎকর্ম সম্পাদনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। মানুষের মনের সঠিক ভাব বা চিন্তা তাকে
কল্যাণকর্মী কাজ সম্পাদনে প্রেরণা জোগায়। মানুষের মনের সবচেয়ে কোমল জায়গায় ছোঁয়া দিয়ে
মাতিয়ে তুলতে না পারলে তার দ্বারা কোনো কাজ করানো সম্ভব হয় না। ভাবকে তাই কাজের দাস
বানিয়ে কাজ সম্পাদন করতে হয়।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে মানুষ বড় হয় তার কাজের মাধ্যমে।
সঠিক কর্মের মাধ্যমে মানুষ কাক্সিক্ষত সাফল্য লাভ করতে পারে। কর্ম ও নিজস্ব চিন্তা
মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করে। উদ্দীপকের
এই দিকটি ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধেও উল্লিখিত হয়েছে। তাই সাফল্য লাভের পূর্বশর্ত হলো সঠিক
চিন্তা ও কর্ম।
(ঘ) ‘চিন্তা যদি পরিচ্ছন্ন না হয় তবে মানুষকে ভাবের
সাগরে হাবু-ডুবু খেতে হয়’- কথাটি তাৎপর্যপূর্ণ।
‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে লেখক বলেছেন, ভাব জিনিসটা খুবই ভালো মানুষকে আয়ত্তে আনার জন্য
তার সর্বাপেক্ষা কোমল জায়গায় ছোঁয়া দিতে হয়। আবার শুধু ভাব নিয়েই থাকব। লোককে শুধু
কথায় জাগিয়ে রাখব। এটি একটা মস্ত বদখেয়াল। ভাবকে কাজের দাসরূপে নিয়োগ করতে না পারলে
ভাবের কোনো সার্থকতাই থাকে না।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে মানুষ বড় হয় কর্মের মাধ্যমে।
সঠিক কাজের মাধ্যমে মানুষ কাক্সিক্ষত সাফল্য লাভ করতে পারে। কর্ম ও নিজস্ব চিন্তা মানুষকে
সঠিক পথে পরিচালনা করে । তাই চিন্তা পরিচ্ছন্ন না হলে মানুষকে ভাবের সাগরে হাবু-ডুবু
খেতে হয়। যা তাকে প্রকৃত মানুষ হওয়া থেকে বিরত রাখে।