মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তায় ইবনে খালদুনের অবদান

মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তায় ইবনে খালদুনের অবদান, মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তায় ইবনে খালদুনের অবদান লিখ, রাষ্ট্রচিন্তায় ইবনে খালদুনের অবদান গুলো উল্লেখ কর।
Follow Our Official Facebook Page For New Updates


Join our Telegram Channel!

প্রশ্ন ॥ মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তায় ইবনে খালদুনের অবদান লিখ | অথবা, রাষ্ট্রচিন্তায় ইবনে খালদুনের অবদান গুলো উল্লেখ কর।

মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তায় ইবনে খালদুনের অবদান

ভূমিকা : বিশ্বের অন্যতম অমর প্রতিভা ইবনে খালদুনের রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কিত আলোচনা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। রাষ্ট্রদর্শনের যেসব ক্ষেত্রে তার মৌলিক অবদান প্রাচ্য প্রতীচ্যের সকল সমাজে অবিসংবাদিতভাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে তা হলো তাঁর 'আসাবিয়া তত্ত্ব।' 

এক্ষেত্রে ঐতিহাসিক যুক্তিবাদ, ইতিহাসের সমাজবিজ্ঞানের গুরুত্ব এবং রাষ্ট্রীয় ও সমাজজীবনে অর্থনীতির প্রভাব লক্ষণীয় 


মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তায় ইবনে খালদুনের অবদানসমূহ :

১. আসাবিয়াত বা গোষ্ঠী সংহতি : 

ইবনে খালদুনের মতে, রাষ্ট্রে মৌল ভিত্তি আসাবিয়াত বা গোষ্ঠী সংহতি। পারস্পরিক নির্ভরশীলতা থেকে এই গোষ্ঠী সংহতির উৎপত্তি। রাষ্ট্রচিন্তায় ইবনে খালদুনের অবদান

তাঁর মতে, মানুষ সামাজিক ও রাজনৈতিক জীব। আর সামাজিক জীবনের জন্যই রাষ্ট্রের উৎপত্তি। তবে রাষ্ট্রের উৎপত্তি, বিকাশ, চরম উন্নতি ও অবনতির মূলে রয়েছে গোষ্ঠী সংহতি। 


২. শক্তিশালী শাসক : 

আসাবিয়াত বা গোষ্ঠী সংহতির ফলে রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়। আর সেই রাষ্ট্রের শাসন সংক্রান্ত কাজ একজন শক্তিশালী শাসকের হাতে ন্যস্ত হওয়াই উত্তম। কেননা মানুষের পাশবিক প্রবৃত্তির কারণেই সমাজে কলহ ও দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। 

ফলে সামাজিক সংহতি বিনষ্ট হয়। তাই পশুবৃত্তি দমনের লক্ষ্যে একজন সৎ ও শক্তিশালী শাসকের প্রয়োজন যার হাতে সার্বভৌম ক্ষমতা থাকবে। রাষ্ট্রচিন্তায় ইবনে খালদুনের অবদান


৩. রক্তের সম্পর্ক : 

ইবনে খালদুনের মতে, রক্তের সম্পর্ক রাষ্ট্রীক সংহতি সুদৃঢ়করণে সহায়তা করে। এটি পারস্পরিকসহযোগিতা বৃদ্ধিতে যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা পালন করে। 

যেমন- আরব বেদুঈনরা রক্তের সম্পর্কের ভিত্তিতে সংঘবদ্ধভাবে বসবাস করছে এবং বহিঃশত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য তৎপর রয়েছে। রাষ্ট্রচিন্তায় ইবনে খালদুনের অবদান


৪. ঐক্যবদ্ধ ধর্মবিশ্বাস : 

ইবনে খালদুন রাষ্ট্র ও সংহতির ভিত্তি হিসেবে ধর্মবিশ্বাসকে সমর্থন দিয়েছেন। বিভিন্ন ধর্মের প্রভাবে মানুষ রাষ্ট্র গঠন করে ও সংহতি প্রকাশ করে থাকে। রাষ্ট্রিক সংহতির মূলে ধর্ম বিশ্বাসকে স্বীকার করা হয়েছে। 

ঐক্যবদ্ধ ধর্মবিশ্বাস জাতি ও সম্প্রদায়ের মানসিকতা ও সাহসিকতা মজবুত করে ও শক্তিশালী জাতি গঠনে সহায়তা করে। রাষ্ট্রচিন্তায় ইবনে খালদুনের অবদান


৫. বৈজ্ঞানিক ও যুক্তিবাদী ধারণা : 

ইতিহাসের বৈজ্ঞানিক ও যুক্তিবাদী ব্যাখ্যা ইবনে খালদুনকে রাষ্ট্রচিন্তায় স্থায়ী আসন দিয়েছে। তিনি প্রাচীন ও মধ্যযুগের দেবদেবী ও বাইবেল নির্ভর ইতিহাসকে বৈজ্ঞানিক ও যুক্তিবাদী ব্যাখ্যা দিয়ে বিশ্বজনীন মর্যাদা দান করেন। 

ইতিহাসকে শাশ্বত ও সার্বজনীন মানবতার প্রেক্ষিতে বিচার করেছেন। অর্থাৎ বৈজ্ঞানিক ও যুক্তিবাদী ব্যাখ্যা দিয়ে ইতিহাস সম্পর্কে পূর্বের ধারণার আমূল পরিবর্তন ঘটান।


৬. রাষ্ট্রনীতি ও অর্থনীতি সম্পর্কযুক্ত : 

ইবনে খালদুন রাষ্ট্রনীতির সাথে অর্থনীতির সম্পর্ক নির্ণয় করেছেন। তাঁর মতে, কোনো দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নির্ভর করে মজবুত অর্থনীতির উপর। 

তিনি রাষ্ট্রের রাজস্ব সংগ্রহের জন্য যাকাত, খারাজ, জিজিয়া ইত্যাদি স্বাভাবিক করের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তাঁর মতে, সুষম বাজেট স্থিতিশীল রাজনীতির মেরুদণ্ড। রাষ্ট্রচিন্তায় ইবনে খালদুনের অবদান


৭. রাষ্ট্র ও সমাজের সম্পর্ক : 

ইবনে খালদুন তার প্রথমদিকে রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করলেও শেষদিকে েেস রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যকার সম্পর্ককে স্বীকার করেছেন। 

একটি ব্যতিক্রম হলে অন্যটিও ক্ষতিগ্রস্থ হবে। অর্থাৎ, বস্তুর সাথে বস্তুর আকারের যে সম্পর্ক রাষ্ট্রের সাথে সমাজেরও সেই সম্পর্ক।


৮. সমাজবিজ্ঞানের সাথে ইতিহাসের সম্পর্ক : 

ইবনে খালদুন সমাজবিজ্ঞানের সাথে ইতিহাসের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করতে গিয়ে গভীর পাণ্ডিত্যের পরিচয় দেন। বিজ্ঞানভিত্তিক ইতিহাস রচনা করতে হলে সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান থাকা আবশ্যক। 

যে ঐতিহাসিক ইতিহাসকে সমাজবিজ্ঞানের তত্ত্ব ও তথ্যের উপর প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়, তার পক্ষে সঠিক ইতিহাস রচনা করা সম্ভব নয়।


৯. সমাজ ও মানুষের উপর জলবায়ুর প্রভাব : 

সমাজের মানুষের চরিত্র গঠন, রাষ্ট্রীয় সংগঠন এবং কৃষ্টি ও সংস্কৃতির উপর ভৌগোলিক অবস্থা ও জলবায়ুর প্রচ্ছন্ন প্রভাব রয়েছে। 

আবহাওয়া ও জলবায়ুর তারতম্যের সাথে অঞ্চলভেদে মানুষের আচার-আচরণ, রীতিনীতি ও শাসনব্যবস্থায় ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। রাষ্ট্রচিন্তায় ইবনে খালদুনের অবদান


উপসংহার :

উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বেশকিছু মৌলিক অবদানের জন্য ইবনে খালদুন মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। 

তার চিন্তাধারায় গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটলের প্রভাব থাকায় তাকে প্রাচ্যের এরিস্টটলও বলা হয়। রাষ্ট্রচিন্তায় বিশেষ অবদানের জন্য দার্শনিক হবস, মন্টেস্কু, ভলটেয়ার, গীবন প্রমুখ ইবনে খালদুনের কাছে ঋণী।

রাষ্ট্রচিন্তায় ইবনে খালদুনের অবদান, র

নিত্য নতুন সকল আপডেটের জন্য জয়েন করুন

Telegram Group Join Now
Our Facebook Page Join Now
Class 8 Facebook Study Group Join Now
Class 7 Facebook Study Group Join Now
Class 6 Facebook Study Group Join Now

Post a Comment