বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের মূল প্রত্যয়গুলো আলোচনা কর

0
ফেইসবুকে আমাদের সকল আপডেট পেতে Follow বাটনে ক্লিক করুন।




বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের মূল প্রত্যয়গুলো আলোচনা কর। অথবা, বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের মূল ইস্যুসমূহ আলোচনা কর। অথবা, বাংলাদেশ নারী আন্দোলনের কারণ আলোচনা কর।

বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের মূল প্রত্যয়গুলো আলোচনা কর

‘টু দি কনসায়েন্স অব পিপল' শিরোনামে বলা হয়েছে, পরাধীন দেশে স্বাধীনতাকামী। বাংলাদেশের নারী সমাজের উপর পাক সামরিক জান্তার অত্যাচারের চেয়েও নির্মম নৃশংসতার শিকার হয়েছে এদেশের নারী সমাজ। 

উনিশ শতকে নারী আন্দোলন দানা বেধেছিল নতুন ধরনের সমাজ ব্যবস্থার আলোকে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক বিপ্লব, শিল্পবিপ্লব, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং তারই প্রত্যক্ষ ফলাফলে সৃষ্ট সমাজ ও রাষ্ট্রীয় এক শতাব্দী পরে বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে বাংলার নারী আন্দোলন গড়ে উঠেছে। 

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী হলেও পুরুষ শাসিত এ সমাজ পুরুষের মতো নারীদের সমান সুযোগ-সুবিধা দিতে নারাজ। 

নারীদের প্রতি যে অন্যায় ও বৈষম্য রয়েছে তা এদেশের নারী সমাজ উপলব্ধি করতে পেরেছে এবং এগুলো মেনে না নেয়ার মধ্যে দিয়েই নারী আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটেছে। এ আন্দোলন মূলত গড়ে উঠেছে কিছু ইস্যুর উপর ভিত্তি করে। যা নিম্নে আলোচনা করা হলো

নারী আন্দোলনের মূল প্রত্যয় : 

সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে নারী সমাজ তাদের অধিকার আদায়ের ব্যাপারে সচেতন হয়ে উঠেছে। নারীরা তাদের সকল অধিকার আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে। 

আন্তর্জাতিক ও বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের যারা পথিকৃত তাদের বক্তব্যের পরম্পরায় নারী আন্দোলনের মূল প্রত্যয় বেরিয়ে এসেছে। (১৯৭০-২০০০) বেইজিং বিশ্ব নারী সম্মেলন হচ্ছে কেন্দ্রবিন্দু।

বর্তমানে নারী আন্দোলনে প্রধানত দুটি প্রত্যয় রয়েছে বাংলাদেশে। যথা : 

(ক) Uniform Code of Law.

(খ) CEDAW এর প্রতিটি ধারাকে রাষ্ট্র কর্তৃক গ্রহণ করা 

উপরিউক্ত প্রত্যয় ছাড়া বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের চিহ্নিত যেসব প্রত্যয় রয়েছে সেগুলো নিম্নে উপস্থাপন করা হলো : 

(ক) শিক্ষাক্ষেত্রে :

১. নারী সাক্ষরতার নিম্নহার এবং অব্যাহত নারী-পুরুষ বৈষম্য 

২. তুলনামূলকভাবে নারী শিক্ষায় কম অর্থ বরাদ্দ।

৩. নারী শিক্ষার লক্ষ্যে উন্নয়ন পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সমন্বয়ের অভাব।

৪. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নারীর অনগ্রসরতা। 

৫. পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যক্রমে পুরুষ প্রাধান্য।

৬. তথ্য ও গবেষণা কেন্দ্রের অভাব।


(খ) পারিবারিক :

১. পারিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ও সম্পদে নারীর নিয়ন্ত্রণের অধিকারহীনতা। 

২. পিতৃপ্রধান পবিরার ও পরিবারে নারীর অসম অবস্থান।

৩. নারীর প্রতি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।

৪. নারীর গৃহস্থালি, কাজকর্মের স্বীকৃতি ও মূল্যায়ন না হওয়া। 

৫. পুত্র সন্তানের প্রতি দুর্বলতা এবং কন্যা শিশুর প্রতি বৈষম্য।

৬. অপরের উপর নির্ভরশীলতা। 

৭. বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ।

৮. যৌতুক প্রথা চালু থাকা।

৯. বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইন


(গ) অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে :

১। শ্রম বাজারে নারীর সীমিত প্রবেশাধিকার। 

২। কাজের সন্ধানে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী ও দালালদের খপ্পরে পড়ে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য হয় নারী।

৩. অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূলধারায় নারীর অনুপস্থিতি 

৪. নারী কম মুজরিতে কাজ করতে বাধ্য হয়।

৫। শ্রমজীবী ও কর্মজীবী নারীদের শিশু রক্ষণাবেক্ষণে অব্যবস্থা। 

৬. ঋণপত্র অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে নারী উদ্যোক্তার টিকে থাকার সমস্যা

৭. নারী হচ্ছে দরিদ্রতম ব্যক্তি।

৮. সম্পদে নারীর অধিকার না থাকা। 

৯. ট্রেড ইউনিয়নে নারীর অধিকার অবহেলিত। 1

১০. সম্পদে নারীর অধিকার না থাকা।

১১. নারীর কৃষিকাজে যে অবদান তার স্বীকৃতি না দেয়া। 

১২. পোশাক শিল্পে নারী শ্রমিকদের বেতন বৈষম্য অল্প মজুরি ও চাকরির অনিশ্চয়তা। 

১৩. পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাজেটে নারী প্রত্যয়ে বরাদ্দ না থাকা ।


(ঘ) নারী নির্যাতন ও মানবাধিকার বিষয়ক সমস্যা: 

১. সর্বত্র নারীর জন্য নিরাপত্তাহীনতা

২. সমাজে ও পরিবারে মানবিক ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অভাব 

৩. নির্যাতন, পাচার ও ধর্ষণের শিকার নিরাশ্রিত অসহায় নারীদের পুনর্বাসন সেবা ও প্রতিষ্ঠানের অভাব।

৪. আইনের শাসনের অবমাননা করে ধর্মীয় অনুশাসনের অপব্যাখ্যা ও প্রয়োগ এবং নারীকে ফতোয়ার শিকার করে নির্যাতন করা। 

৫. প্রশাসনিক ক্ষেত্রে, বিশেষত পুলিশ প্রশাসনে নারী নির্যাতন বিষয়ে উদাসীনতা ও পুলিশ কর্তৃক নারী নির্যাতন ।

৬. নারী নির্যাতন বিরোধী আইনের ত্রুটি। ৭. প্রচলিত পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি।

৮. ফৌজদারি ও দেওয়ানি বিধিতে নারী-পুরুষের বৈষম্য। যেমন- নাগরিকত্ব আইন ।

৯. সকল সম্প্রদায়ের প্রচলিত বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইনের অনুশাসন। যা সংবিধানে ঘোষিত নারী-পুরুষের আইনগত সমঅধিকারের বিরোধী। 

১০. সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নারীর অধস্তন অবস্থান।


(ঙ) স্বাস্থ্যবিষয়ক সমস্যা :

১. নারীরা এইডস, বক্ষ ক্যান্সার ও অন্যান্য জটিল রোগের শিকার।

২. স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ক্ষেত্রে লিঙ্গগত বৈষম্য।

৩. পুষ্টিহীনতা।

৪. সন্তান প্রসবে জটিলতা ও অধিক হারে প্রসূতি মৃত্যু। 

৫. শিশু মৃত্যুর অধিক হার।

৬. ধর্মীয় কুসংস্কার 

৭. গর্ভবর্তী ও সন্তান দানকারী মায়ের চাহিদা অপূর্ণ থাকা।

৮. নারীকে একতরফাভাবে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণে চাপ প্রয়োগ । 

উপসংহার : 

পরিশেষে বলা যায় যে, নারীরা আজ তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন। তাদের প্রতি যে উপেক্ষা ও বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি সেগুলো তারা আর মেনে নিতে রাজি নয়। এ সচেতনতা থেকে উদ্ভূত প্রতিবাদই হয়তো তাদেরকে একদিন সফলতার দ্বারে পৌঁছে দিবে। 

সুতরাং বলা যায় যে, নারীদেরকে যে বিভিন্ন দিক থেকে বঞ্চিত ও অধস্তন করে রাখা হয়েছে তার প্রতিবাদের ভাষাগুলোই হচ্ছে নারী আন্দোলনের প্রত্যয়।

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)