
বিশ্বায়ন কি? অথবা, বিশ্বায়ন সংজ্ঞা দাও? অথবা, বিশ্বায়ন বলতে কি বুঝায়?
ভূমিকা : গোবালাইজেশন বা বিশ্বায়ন কোন অবাস্তব ধারণা নয়। আজ সারা বিশ্বে পুঁজি ও তথ্য প্রযুক্তির অবাধ প্রয়োগ ও বিস্তৃতি ঘটায় পৃথিবী এখন 'গোবাল ভিলেজ'- এ পরিণত হয়েছে। এই গোবাল ভিলেজের ধারণা থেকেই বিশ্বায়ন প্রত্যয়নটি উদ্ভব হয়েছে।
বিশ্বায়ন এর সংজ্ঞা:
বিশ্বায়ন বলতে সাধারণত পুঁজি ও প্রযুক্তির অবাধ প্রসারের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সমন্বয় সাধনকে বুঝায়। বিশ্বায়নকে অভিহিত করা হয়েছে এমন একটি প্রক্রিয়া হিসেবে, যা রাষ্ট্র ও সম্প্রদায়ের পুরনো কাঠামো ও সীমানাকে অবলুপ্ত করছে।
বিশ্বায়নকে বলা হচ্ছে একটি সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক জীবনের ক্রমবর্ধমান পরাজাতীয়করণ যার ফলে সৃষ্টি হয়েছে এক বিশ্ব সীমানা, এক বিশ্ব সম্প্রদায়।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা: নিম্নে বিশ্বায়নের কতিপয় জনপ্রিয় সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো :
গিডেন্স (Giddens) বিশ্বায়নের প্রসঙ্গে বলেন,
“স্থানিক অভিজ্ঞতার মূল সূত্রটি বদলে গেছে, নৈকট্য ও দূরত্ব পরস্পরের সাথে এমনভাবে একত্র হয়েছে যার তুলনা অতীত থেকে মেলা ভার।”
ইউরোপীয় ইউনিয়ন 'বিশ্বায়ন' সম্পর্কে বলেন,
“বিশ্বায়ন হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যা অধিক জনগণের মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়া- প্রতিক্রিয়াকে বোঝায়। এর ফলে পৃথিবী ব্যাপী, অধিক ব্যবসা, অধিক বাজার এবং অধিক অর্থনীতির মধ্যে প্রযুক্তির মাধ্যমে যোগাযোগ ঘটে।”
Robertson এর মতে
"পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে পৃথিবীকে ছোট করে আনা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করাকেই বিশ্বায়ন বলে”।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আইয়ুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন,
“বিশ্বায়ন বলতে বাণিজ্য উদারীকরণ যেমন- নিয়ন্ত্রণ মুক্তকরণ বেসরকারিকরণ এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে যুক্ত ও অবাধ বাণিজ্যকে বুঝায়।"
M. Waters এর মতে,
“বিশ্বায়ন হচ্ছে একটি সামাজিক প্রক্রিয়া যাতে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থাধীনে ভৌগোলিক দূরত্ব কমে আসার বাধা অপসারণ করে এবং যাতে জনগণ পিছিয়ে যাওয়া সম্পর্কে অধিক সচেতন হয়।
উপসংহার :
উপরি উক্ত আলোচনা হতে বলা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উৎপাদনের উপকরণ বাজার সংস্কৃতি, তথ্য প্রযুক্তি, বাণিজ্য অংশীদার, আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ, মানবাধিকার ও অন্যান্য উপাদানের মধ্যে মিল খুজে বের করে বিভিন্ন দেশের বাজারকে একটি বাজার হিসেবে ধরে নিয়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম তথা অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করাকে বিশ্বায়ন বলা হয় ।'