কোষ প্রাচীর কাকে বলে? এর গঠন ও কাজসহ বিস্তারিত জানুন

0
ফেইসবুকে আমাদের সকল আপডেট পেতে Follow বাটনে ক্লিক করুন।




কোষ প্রাচীর কাকে বলে? কোষ প্রাচীরের গঠন ও কাজ সহ বিস্তারিত জানুন

কোষ প্রাচীর কাকে বলে? এর গঠন ও কাজ সহ বিস্তারিত জানুন

কোষ প্রাচীর কাকে বলে? 

উদ্ভিদ কোষের অপেক্ষাকৃত শক্ত, মৃত বা বস্তু দিয়ে আবৃত আবরণকে কোষ প্রাচীর বলে। প্রাণী কোষ প্রাচীর থাকে না। 

অন্যভাবে বলা যায়, জড় ও শক্ত যে প্রাচীর দিয়ে উদ্ভিদকোষ পরিবেষ্টিত থাকে তাকে কোষপ্রাচীর বলে।

এভাবেও বলতে পারি, প্রতিটি উদ্ভিদকোষের কোষঝিল্লী বা প্লাজমামেমব্রেনের চারদিকে অপেক্ষাকৃত শক্ত ও জড় আবরণ থাকে। একে কোষপ্রাচীর বলে।

সংজ্ঞা থেকে একটা জিনিস মনে হলোনা? এখানে শুধু উদ্ভিদকোষের বলা হয়েছে। তাহলে কি কোষপ্রাচীর শুধু উদ্ভিদকোষে থাকে?প্রানিকোষে থাকেনা? হ্যাঁ, একদম ঠিক ধরেছেন, এক্ষেত্রে প্রাণিকোষ একটু অবহেলিত।

 আর এ তথ্যটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ

" শুধুমাত্র উদ্ভিদকোষে কোষপ্রাচীর থাকে"। প্রাণিকোষে কোনো কোষপ্রাচীর থাকেনা।


কোষপ্রাচীরের আবিষ্কারক কে? 

রবার্ট হুক, ১৬৬৫ সালে কোষপ্রাচীর আবিষ্কার করেন।

আরেকটা তথ্য যা এখান থেকে জানা থাকা উচিত, ১৬৬৫ সালে রবার্ট হুক যা আবিষ্কার করেছিলো তা ছিলো মূলত কোষপ্রাচীর।


কোষপ্রাচীরের অবস্থান কোথায়?

উদ্ভিদকোষে মধ্য পর্দা এবং কোষঝিল্লির মাঝখানে এর অবস্থান। ছত্রাকেও কিন্তু কোষ প্রাচীর থাকে। এক কোষী উদ্ভিদ বা ব্যাকটেরিয়াতে কোষঝিল্লির বাইরে থাকে কোষপ্রাচীর।


কোষপ্রাচীরের গঠন:

কোষ প্রাচীরের ভৌতগঠন:

একটি পূর্ণ বিকশিত উদ্ভিদকোষের কোষপ্রাচীর প্রধানত তিনটি ভিন্ন ধরনের স্তর নিয়ে গঠিত। 

(১) মধ্যপর্দা(middle lamella): 

  • এটি দুটি পাশাপাশি কোষের মধ্যবর্তী একটি সাধারণ পাতলা জেলীর মতো পর্দা। 
  • মাইটোসিস কোষ বিভাজনে, টেলোফেজ পর্যায়ে এর সূচনা ঘটে।
  • সাইটোপ্লাজম থেকে ফ্রাগমোপ্লাস্ট ও গলগিবডি থেকে পেকটিন জাতীয় ভেসিকলস মিলিত হয়ে এটি তৈরি করে।
  • এটি সিমেন্টের মতো দুটি কোষকে সংযুক্ত করে রাখে।

(২) প্রাথমিক প্রাচীর( primary wall): 

  • মধ্যপর্দার উপর সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ, গ্লাইকোপ্রোটিন জমা হয়ে যে পাতলা স্ত তৈরি হয়, সেটিই প্রাথমিক প্রাচীর
  • এটি স্থিতিস্থাপক, ১-৩ মাইক্রোমিটার পুরু।
  • মধ্যপর্দার অন্তঃতলে তৈরি হয়।

(৩) সেকেন্ডারী প্রাচীর( secondary wall): 

কোনো কোনো উদ্ভিদকোষে( ট্রাকিড, ফাইবার ইত্যাদি) প্রাথমিক প্রাচীরের উপর সেলুলোজ, লিগনিন জমা হয়ে যে পুরু স্তর সৃষ্টি হয়, সেটিই সেকেন্ডারী প্রাচীর।

  • সাধারনত কোষের বৃদ্ধি পূর্নাঙ্গ হওয়ার পর এটি ঘটে।
  • সেকেন্তারি প্রাচীর তিন স্তরবিশিষ্ট, এটি ৫-১০ মাইক্রোমিটার পুরু।
  • ভাজক কোষ ও অধিক মাত্রায় বিপাকীয় কোষে সেকেন্ডারি প্রাচীর তৈরি হয়না।


কোষপ্রাচীর নিয়ে আলোচনা হলে, কূপ নিয়ে কথা হবে না, তা হয় নাকি?

কূপ এলাকা(Pit fields): 

  • কোষ প্রাচীরের অনেক স্থানে সেলুলোজ স্তর অনুপস্থিত থাকে, এই স্থানকে কূপ বলে।
  • মুখোমুখি অবস্থিত দুটি কূপকে পিট জোড় বা পিট পেয়ার বলে।
  • কূপদুটির মধ্যবর্তী স্থানের মধ্যপর্দাকে পিট মেমব্রেন বলে।


কোষ প্রাচীরের রাসায়নিক গঠন:

(১) মধ্যপর্দা:

  • অধিক পরিমানে পেকটিক এসিড থাকে।
  • অদ্রবনীয় ক্যালসিয়াম পেকটেট, ম্যাগনেসিয়াম পেকটেট লবন থাকে, যাকে পেকটিন বলা হয়। 
  • অল্প পরিমানে প্রোটোপেকটিন থাকে।

(২) প্রাথমিক প্রাচীর:

  • সেলুলোজ
  • হেমিসেলুলোজ: এটিতে থাকে xylans, arabans, galactans, xyloglucan( পলিস্যাকারাইডস)
  • Xyloglucan প্রাচীর গঠনে ক্রসলিংক হিসেবে কাজ করে।
  • গ্লাইপ্রোটিন: এটিতে থাকে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ইত্যাদি।
  • সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ, গ্লাইকোপ্রোটিন নিয়ে তৈরি  হয় প্রাথমিক প্রাচীর।


(৩) সেকেন্ডারী প্রাচীর: 

  •  লিগনিন, সুবেরিন, ওয়াক্স(মোম), কিউটিন, ও নানা অজৈব লবন থাকে 
  • কোষ প্রাচীর: 
সেলুলোজ: ৪০%
হেমিসেলুলোজ: ২০%
পেকটিন: ৩০%
গ্লাইকোপ্রোটিন: ১০%

  • ছত্রাকের কোষ প্রাচীর: কাইটিন দিয়ে তৈরি।
  • ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীর: লিপিড-প্রোটিন পলিমার দিয়ে তৈরি।


কোষ প্রাচীরের সূক্ষ্ম গঠন (Ultra- structure of cell wall): 

এই অংশটি মূলত এমসিকিউ এর জন্য।

পর্যায়ক্রমে,

১. প্রধান উপাদান 'সেলুলোজ'( একটি পলিস্যাকারাইড যা ৬- কার্বনবিশিষ্ট বিটা- D গ্লুকোজের অসংখ্য অনু নিয়ে গঠিত)।

২. এক হাজার থেকে তিনহাজার সেলুলোজ অনু নিয়ে একটি  'সেলুলোজ চেইন' গটিত হয়।

৩. প্রায় একশ সেলুলোজ চেইন মিলিত হয়ে ' ক্রিস্টালাইন মাইসেলি' গঠন করে।

৪. প্রায় ২০ টি মাইসেলি নিয়ে তৈরি হয় 'মাইক্রোফাইব্রিল'

৫. ২৫০ টি মাইক্রোফাইব্রিল নিয়ে তৈরি হয় 'ম্যাক্রোফাইব্রিল'

৬. অনেকগুলো ম্যাক্রোফাইব্রিল নিয়ে তৈরি হয় একটি 'তন্তু বা ফাইবার'। 


কিছু গুরুত্বপূণূ তথ্য:

কোষপ্রাচীরের ক্ষুদ্রতম একক: মাইসেলি

কোষপ্রাচীরের প্রধান উপাদান: সেলুলোজ

 প্রানিকোষে কোষপ্রাচীর থাকেনা।


কোষপ্রাচীরের কাজ:

  1. কোষকে নির্দিষ্ট আকৃতি দান করে।
  2. বাহিরের পরিবেশ থেকে প্রোটোপ্লাজমকে রক্ষা করে।
  3. কোষের দৃঢ়তা দান করে।
  4. কোষ বিভাজনে সহায়তা করে।
  5. কোষের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
  6. কোষগুলোকে পরস্পর থেকে পৃথক রাখে।

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)