সাম্প্রতিক কালের রাষ্ট্রচিন্তা বলতে কী বুঝ

সাম্প্রতিক কালের রাষ্ট্রচিন্তা বলতে কী বুঝ | What is meant by recent nationalism, সাম্প্রতিক কালের রাষ্ট্রচিন্তা কাকে বলে?
Join our Telegram Channel!

সাম্প্রতিক কালের রাষ্ট্রচিন্তা: আধুনিক রাষ্ট্রদর্শনের একটি পর্যালোচনা

সাম্প্রতিক কালের রাষ্ট্রচিন্তা কাকে বলে

প্রশ্ন: সাম্প্রতিক কালের রাষ্ট্রচিন্তা বলতে কী বুঝ? | What is meant by recent nationalism?

রাষ্ট্রদর্শন হলো মানবসমাজ, রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের প্রকৃতি, উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ। এই দর্শনের উপর ভিত্তি করেই একটি রাষ্ট্রের কাঠামো ও তার পরিচালনার মূলনীতি নির্ধারিত হয়। যুগে যুগে বিভিন্ন দার্শনিক রাষ্ট্রদর্শন সম্পর্কে তাদের নিজস্ব মতবাদ ব্যক্ত করেছেন, যা রাষ্ট্রীয় বিবর্তনে রেখেছে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা। তবে সমকালীন রাষ্ট্রদর্শন বলতে সাধারণত **১৮৩১ সালের পরবর্তী সময়ের রাষ্ট্রচিন্তা**কে বোঝানো হয়, যা আধুনিক বিশ্বের রাষ্ট্রীয় ধারণার ভিত্তি স্থাপন করেছে।

---

সাম্প্রতিক কালের রাষ্ট্রচিন্তার ধারণা ও বিবর্তন

সাম্প্রতিক কালের রাষ্ট্রদর্শন বলতে ১৮৩১ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত রাষ্ট্র সম্পর্কিত ধারণাসমূহকে বোঝায়। এই সময়ে পূর্বের অনেক রাষ্ট্রদর্শন সম্পর্কিত মতবাদ পরিবর্তিত হয়েছে এবং নতুন নতুন চিন্তাধারার উন্মোচন ঘটেছে। নিচে এর প্রধান দিকগুলো তুলে ধরা হলো:

  • বিবর্তনবাদ ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ: হার্বার্ট স্পেনসার রাষ্ট্রদর্শনকে বিজ্ঞানসম্মত করে তোলার জন্য বিবর্তনবাদ ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের প্রবর্তন করেন। তার চিন্তাধারা রাষ্ট্রের ভূমিকা এবং ব্যক্তির স্বাধীনতার উপর জোর দেয়, যা আধুনিক উদারনৈতিকতার অন্যতম ভিত্তি।
  • শান্তি ও শৃঙ্খলা: দার্শনিক কাস্ট তার রাষ্ট্রদর্শনে শান্তি ও শৃঙ্খলার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন, যা একটি সুসংহত সমাজের জন্য অপরিহার্য। এটি আধুনিক রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতার ধারণার সাথে সম্পর্কিত।
  • নিয়ন্ত্রিত ও পরিকল্পিত রাষ্ট্র: হেগেল ও ফিকটে-এর মতো দার্শনিকগণ নিয়ন্ত্রিত ও পরিকল্পিত রাষ্ট্রের প্রবক্তা হিসেবে স্মরণীয়। হেগেল ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের দ্বন্দ্বকে প্রতিষ্ঠিত করে একটি শক্তিশালী ঐতিহাসিক রাষ্ট্রদর্শনের ভিত্তি স্থাপন করেন। তার দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি জার্মানিতে জাতীয়তাবাদের সূচনা করে, যা পরবর্তীতে ইউরোপীয় রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলে।
  • স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্রের ধারণা: হুবোল্ড স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্রের ধারণা দেন, যা স্থানীয় স্বশাসন ও নিজস্ব সিদ্ধান্তের গুরুত্বকে তুলে ধরে। এটি বিকেন্দ্রীকরণের ধারণাকে সমর্থন করে।
  • সমাজতন্ত্র ও শ্রেণিবৈষম্যহীন সমাজ: হেগেলের দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি থেকে প্রেরণা নিয়ে কার্ল মার্কস সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। তার মূল লক্ষ্য ছিল শ্রেণিবৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে উৎপাদনের উপকরণের মালিকানা ব্যক্তিগত না হয়ে সমাজের হাতে থাকবে। এটি বিংশ শতাব্দীর রাষ্ট্রচিন্তা ও রাজনীতিতে এক বিপ্লবী পরিবর্তন আনে এবং বহু দেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে প্রভাবিত করে।
  • সমাজ রাষ্ট্র: সমাজ রাষ্ট্রের প্রবক্তা হিসেবে ব্রাডলের নাম স্মরণীয়, যিনি রাষ্ট্রকে একটি সামাজিক সত্তা হিসেবে দেখেন, যেখানে সমাজের কল্যাণ রাষ্ট্রের প্রধান উদ্দেশ্য।
  • ইচ্ছাই রাষ্ট্রের ভিত্তি: টি. এইচ. গ্রীন এর বিখ্যাত উক্তি, "শক্তিই নয়, ইচ্ছাই রাষ্ট্রের ভিত্তি" (Will, not force, is the basis of the state), আধুনিক গণতান্ত্রিক ধারণার এক গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরে। এটি বোঝায় যে, রাষ্ট্র তার নাগরিকদের সম্মতি ও ইচ্ছার উপর প্রতিষ্ঠিত, নিছক জোরপূর্বক শাসনের উপর নয়। এটিই আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূলমন্ত্র।

এভাবে বিশ্ব দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে এবং সাম্প্রতিক কালের রাষ্ট্রচিন্তা মূলত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার জোয়ারে ভাসছে সারা বিশ্বে। মানুষের পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাব বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মানবসমাজের কথা ভেবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফলস্বরূপ, বিশ্ব আজ আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃত্বের এক মজবুত বন্ধনে আবদ্ধ, যা **বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায়** সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।

---

উপসংহার

পরিশেষে বলা যায় যে, সাম্প্রতিক কালের রাষ্ট্রদর্শন বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে বন্ধুত্ব স্থাপনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে। এটি মানুষের সাম্প্রদায়িক ধ্যানধারণাকে পরিবর্তন করে উন্নত মনমানসিকতা গড়ে তুলতে সহায়তা করেছে, যার ফলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের মাধ্যমে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। নিঃসন্দেহে, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় সমকালীন রাষ্ট্রদর্শন সুদূরপ্রসারী ও অপরিহার্য ভূমিকা পালন করছে, এবং এর প্রভাব আজকের বিশ্ব রাজনীতিতে অনস্বীকার্য।

নতুন নতুন সকল আপডেটের জন্য জয়েন করুন

Post a Comment