
রাষ্ট্রচিন্তার সংজ্ঞা দাও | What is statesmanship?
রাষ্ট্রচিন্তার সংজ্ঞা:
রাষ্ট্র ও সমাজের সামগ্রিক উন্নতির লক্ষ্যে পরিচালিত গভীর ও বিশ্লেষণধর্মী গবেষণা ও আলোচনাই হলো রাষ্ট্রচিন্তা। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো রাষ্ট্র ও সমাজকে সুচারুভাবে পরিচালনা করা এবং কার্যকরভাবে বিদ্যমান সমস্যাগুলো মোকাবিলা করা। রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা মানুষকে একটি উন্নত ও সুসংগঠিত জীবনধারার দিকে ধাবিত করে। বর্তমান বিশ্বে রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং নীতি নির্ধারণে রাষ্ট্রচিন্তার ভূমিকা অনস্বীকার্য।
রাষ্ট্রচিন্তার মূল ধারণা
বিভিন্ন সময়ে মহান দার্শনিক ও মনীষীগণ সমাজ, রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের প্রকৃতি, উদ্দেশ্য এবং এর কার্যাবলি নিয়ে যেসব মতবাদ ও দার্শনিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন, সেগুলোকেই রাষ্ট্রদর্শন বা রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা বলা হয়। সহজ কথায়, এটি রাষ্ট্রের কাঠামো ও শাসনব্যবস্থাকে নির্দেশ করে। তাই রাষ্ট্র সম্পর্কিত যেকোনো মূল্যবান দার্শনিক আলোচনা বা চিন্তাকেই রাষ্ট্রচিন্তা হিসেবে ধরা হয়। এটি রাজনৈতিক দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা: মনীষীদের চোখে রাষ্ট্রচিন্তা
রাষ্ট্রচিন্তার ধারণাকে আরও স্পষ্ট করতে বিভিন্ন প্রখ্যাত পণ্ডিতদের দেওয়া কিছু সংজ্ঞা নিচে দেওয়া হলো:
- অধ্যাপক ওয়েবার এর মতে, "রাষ্ট্রদর্শন বলতে বোঝায় সেই দর্শন যা রাষ্ট্রের গঠন, প্রকৃতি ও উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করে।" এই সংজ্ঞাটি রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামো এবং লক্ষ্য নির্ধারণে রাষ্ট্রচিন্তার গুরুত্ব তুলে ধরে।
- অধ্যাপক হেরম্যানের মতে, "রাষ্ট্রদর্শন রাষ্ট্রের স্থিতিশীল পর্যায়গুলো নিয়ে আলোচনা করে।" এটি রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা এবং এর বিবর্তনশীলতার উপর আলোকপাত করে।
- ভি. ডি. মহাজনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, "রাষ্ট্রদর্শন এমন একটি যৌক্তিক বিশ্লেষণ, যা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার রাজনৈতিক কার্যাবলি ও ব্যাখ্যাদানকারী কর্তৃক প্রকাশিত হয়।" এই সংজ্ঞাটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এবং এর বিশ্লেষণের ওপর জোর দেয়।
- অধ্যাপক ফিলিপ ডোয়েল বলেন, "রাষ্ট্রদর্শনের বিষয়বস্তু প্রধানত তিনটি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। যথা: মানব প্রকৃতি ও তার কার্যকলাপ, জীবনের সমগ্র অনুভূতির জন্য পৃথিবীর অপরাপর বিষয়ের সাথে মানুষের সম্পর্ক এবং সমাজের পারস্পরিক সম্পর্ক।" ডোয়েলের এই সংজ্ঞা রাষ্ট্রচিন্তার ব্যাপকতা এবং মানুষের জীবন ও সমাজের সাথে এর নিবিড় সংযোগকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে।
এই সংজ্ঞাগুলো থেকে বোঝা যায় যে, রাষ্ট্রদর্শন রাষ্ট্রের সামগ্রিক চিন্তাভাবনা এবং এর পরিচালনার বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে। এটি কেবল রাষ্ট্রীয় কাজগুলোর বর্ণনা দেয় না, বরং এর পেছনে থাকা দর্শন এবং নৈতিক ভিত্তিও অনুসন্ধান করে।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায়, রাষ্ট্রদর্শন বা রাষ্ট্রচিন্তা মূলত রাষ্ট্রকেন্দ্রিক সকল সুসংবদ্ধ চিন্তাভাবনা ও বিশ্লেষণের একটি বিশাল ক্ষেত্র। একটি শক্তিশালী ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রের ভিত্তি তৈরিতে এটি প্রধান ভূমিকা পালন করে। রাষ্ট্রচিন্তা অধ্যয়নের মাধ্যমেই আমরা রাষ্ট্রীয় জীবন, নাগরিক অধিকার, কর্তব্য এবং একটি আদর্শ সমাজের স্বরূপ সম্পর্কে বিশদ ধারণা পাই। তাই আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রচিন্তার গুরুত্ব অপরিসীম।
If you believe any content on our website infringes your rights, please contact us. We will review and take action promptly.