বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক চিন্তাধারা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক চিন্তাধারা , প্রশ্ন ॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক চিন্তাধারা সম্পর্কে কী জান? আলোচনা কর ।

প্রশ্ন ॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক চিন্তাধারা সম্পর্কে কী জান? আলোচনা কর । Political thought of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক চিন্তাধারা

উত্তর : ভূমিকা : প্রচলিত একাডেমীক অর্থে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও রাষ্ট্রচিন্তাবিদ বলা না গেলে ও বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পাঠ করে আমরা জানতে পারি তিনি এই বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি নিয়ে সবসময় ভাবতেন। ভাবতেন রাষ্ট্র নিয়েও বঙ্গবন্ধু কোনো তত্ত্ব নিয়ে থাকতেন না। তিনি সবসময় বাস্তব অবস্থার পরিপ্রক্ষিতে সিদ্ধান্ত নিতেন।


বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক চিন্তাধারা : 

বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকে একটি উদ্বৃত্তি দিই, “দুই- চারজন কমিউনিস্ট ভাবাপন্ন ছাত্র ছিল যারা সরকারকে পছন্দ করত না। কিন্তু তারা এমন সমস্ত আদর্শ প্রচার করতে চেষ্টা করত যা তখনকার সাধারণ ছাত্র ও জনসাধারণ শুনলে ক্ষেপে যে। এদের আমি বলতাম, “জনসাধারণ চলেছে পায়ে হেঁটে আর আপনারা আদর্শ নিয়ে উড়োজাহাজে চলছেন। জনসাধারণ আপনাদের কথা বুঝতেও পারবে না, আর সাথেও চলবে না। যতটুকু হজম করতে পারে ততটুকু জনসাধারণের কাছে পেশ করা উচিত।" ম্যাকিয়াভেলীকে সেকুলারিজম এবং এবং বাস্তববাদিতার জন্য যেমন আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক বলা হয় তেমনি বঙ্গবন্ধু সময়োচিত এবং বাস্তববাদী চিন্তার জন্য তাঁকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রচিন্তার জনক বলা যেতে পারে। কারণ, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ তো বঙ্গবন্ধুর চিন্তারই ফসল। News week যেমন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রচ্ছদ করেছে Poet of Politics বলে। প্রত্যেক কবিরই তো রচিত কবিতা থাকে। বঙ্গবন্ধুর রচিত কবিতা হলো 'বাংলাদেশ'। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাঙালি জাতির জনক।


১৯৩৮ সালের ১৬ জানুয়ারি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক গোপালগঞ্জ মিশন স্কুল পরিদর্শনে এসে শেখ মুজিবের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল মিশনারি স্কুলে পড়ার সময় থেকেই। ১৯৩৯ সালে এ বছর স্কুল পরিদর্শনে এসেছিলেন তদানীন্তন অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং পরবর্তীকালে বাংলার প্রধানমন্ত্রী এমনকি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। তিনি স্কুলের ছাদ সংস্কারের দাবির ওপর ভিত্তি করে একটি দল নিয়ে তাদের কাছে যান যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি নিজেই।


১৯৩৯ সালে সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ সভা করার দুঃসাহসের কারণে শেখ মুজিব প্রথম কারাবরণ করেন। ১৯৪০ সালে নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন। সেখানে তিনি এক বছর মেয়াদের জন্য বেঙ্গল মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।


১৯৪২ সালে অসুস্থতার কারণে একটু বেশি বছর বয়সে তিনি এন্ট্রাস (প্রবেশিকা, এখনকার এসএসসি) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এ বছরেই কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে (বর্তমান নাম মওলানা আজাদ কলেজ) আইন পড়ার জন্য ভর্তি হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত এই কলেজটি তখন বেশি নামকরা ছিল। এই কলেজের বেকার হোস্টেলের ২৪ নম্বর কক্ষে তিনি থাকতে শুরু করেন। ওই বছরই তিনি পাকিস্তান আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। পরের বছর মুসলিম লীগে যোগ দেন এবং অগ্রণী বাঙালি মুসলিম নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সান্নিধ্যে আসেন। এখানে তার ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য বিষয় ছিল একটি পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন। ১৯৪৩ সালে বঙ্গীয় মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ১৯৪৪ সালে কুষ্টিয়ায় অনুষ্ঠিত নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের সম্মেলনে যোগদান করেন। এবং মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি রাজনীতিতে অভিষিক্ত হন। এই বছরই কলকাতায় বসবাসকারী ফরিদপুরবাসীদের নিয়ে তৈরি ফরিদপুর ডিস্ট্রিক্ট এসোসিয়েশনের সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৪৬ সালে শেখ মুজিব বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কলকাতা ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন। এই বছরই প্রাদেশিক নির্বাচনে তিনি মুসলিম লীগের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ১৯৪৭ সালে অর্থাৎ দেশ বিভাগের বছর মুজিব কলকাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। ভারত ও পাকিস্তানি পৃথক হওয়ার সময়ে কলকাতায় ভয়ানক হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা হয়। এ সময় মুজিব মুসলিমদের রক্ষা এবং দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সোহরাওয়ার্দীর সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক তৎপরতায় শরিক হন। পাকিস্তান-ভারত পৃথক হয়ে যাওয়ার পর শেখ মুজিব ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা করেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, যার মাধ্যমে তিনি উক্ত প্রদেশের অন্যতম প্রধান ছাত্রনেতায় পরিণত হন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, স্বাধীনতা উত্তরকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রায় সাড়ে তিন বছর বাংলাদেশ সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর সরকারকে অত্যন্ত প্রতিকূল এবং বিধ্বস্ত অবস্থার মধ্যে কাজ করতে হয়। কোটি কোটি জনঅধ্যুষিত যুদ্ধবিধ্বস্ত বিশৃঙ্খল একটি দেশের অসংখ্য সদস্য নিয়ে তাকে শূন্যহাতে দেশ পরিচালনার কাজ শুরু করতে হয়েছিল।

Post a Comment