বাংলাদেশের বনজ সম্পদ ও তার প্রতিষ্ঠান

বাংলাদেশের বনজ সম্পদ, বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, বনভূমির ধরণ, সুন্দরবন, লাউয়াছড়া ও রাতারগুল বন সম্পর্কে বিসিএস ও চাকরির পরীক্ষার উপযোগী বিস্তারিত তথ্য।

বাংলাদেশের বনজ সম্পদ ও তার প্রতিষ্ঠান

বাংলাদেশের বনজ সম্পদ, বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, বনভূমির ধরণ, সুন্দরবন, লাউয়াছড়া ও রাতারগুল বন সম্পর্কে বিসিএস ও চাকরির পরীক্ষার উপযোগী বিস্তারিত তথ্য।

প্রাকৃতিক পরিবেশে অতি ঘনভাবে বৃক্ষলতাদি জন্মে বনভূমির সৃষ্টি হয়। এ বনভূমিই আদিম মানুষের প্রধান, প্রথম আশ্রয় এবং খাদ্যভাণ্ডার ছিল। তাই অতীতকাল থেকেই বনভূমির গুরুত্ব অপরিসীম। বনভূমির বৃক্ষলতা, গুল্ম, প্রাণী, ফলমূল সবকিছুকেই বনজ সম্পদ বলা হয়। একটি দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংরক্ষণ এবং বনজসম্পদ আহরণের জন্য ন্যূনপক্ষে ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা আবশ্যক। অঞ্চল হিসেবে বাংলাদেশের বৃহত্তম বনভূমি পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের বনভূমি (প্রায় ১২,০০০ বর্গকিলোমিটার)। বাংলাদেশের একমাত্র কৃত্রিম ম্যানগ্রোভ বন চকোরিয়া, কক্সবাজার।

  • বাংলাদেশের বন গবেষণা ইনস্টিটিউট অবস্থিত: চট্টগ্রামে
  • বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন অবস্থিত: ঢাকার মতিঝিলে (BFIDC → Bangladesh Forest Industries Development Corporation)
  • বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় বনভূমি নেই: ২৮টি জেলায়
  • বাংলাদেশে সরকারি বনের সংখ্যা: ১৭টি
  • টাইডাল বন: যে বন জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয় আবার ভাটার সময় শুকিয়ে যায়
  • পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন/বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় টাইডাল বন: সুন্দরবন
  • বিভাগ অনুসারে সবচেয়ে বেশি বনভূমি: চট্টগ্রাম বিভাগে (৪৩%)
  • বিভাগ অনুসারে সবচেয়ে কম বনভূমি: রাজশাহী বিভাগে (২%)
  • জেলা অনুসারে সবচেয়ে বেশি বনভূমি: বাগেরহাট জেলায়
  • পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য বনভূমি আছে: ৭টি জেলায় (বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, খুলনা, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান ও কক্সবাজার)
  • উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী প্রকল্প: ১০টি জেলায়
  • প্রথম জাতীয় বননীতি গৃহীত হয়: ১৯৭২ সালে
  • জাতীয় বৃক্ষরোপণ শুরু হয়: ১৯৭২ সালে
  • জাতীয় বৃক্ষমেলা চালু হয়: ১৯৯৪ সালে
  • পরিবেশ নীতি ঘোষণা করা হয়: ১৯৯২ সালে
  • বাংলাদেশের উচ্চতম বৃক্ষ: বৈলাম (বান্দরবান গভীর অরণ্যে, উচ্চতা ২৪০ ফুট)
  • দ্রুততম বৃদ্ধি সম্পন্ন গাছ: ইপিল ইপিল
  • লুকিং গ্লাস ট্রি: সুন্দরী বৃক্ষ
  • নেপিয়ার: এক ধরনের ঘাস
  • সূর্যকন্যা বলা হয়: তুলা গাছকে
  • পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর গাছ: ইউক্লিপটাস
  • বনাঞ্চল থেকে সংগৃহীত কাঠ ও লাকড়ি দেশের মোট জ্বালানির ৬০% পূরণ করে।
  • মধুপুর বনাঞ্চলের প্রধান বৃক্ষ: শাল
  • সবচেয়ে বেশি শাল গাছ আছে: ভাওয়াল অঞ্চলে
  • সাম্পান এবং নৌকা তৈরিতে ব্যবহৃত হয় গামার ও চাপালিশ গাছ।
  • বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র অবস্থিত করমজল, সুন্দরবন।
  • ঘরের এবং বৈদ্যুতিক তারের খুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয় শাল গাছ।
  • ছাতিম গাছ ব্যবহৃত হয় টেক্সটাইল মিলে।
  • বাংলাদেশের প্রাচীনতম পার্ক ও গার্ডেন: বাহাদুর শাহ পার্ক ও বলধা গার্ডেন।
  • লাউয়াছড়া বনের বিরল প্রাণী: উল্লুক।

বনভূমির ধরন ও শ্রেণিবিভাগ

উদ্ভিজ বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বাংলাদেশের বনভূমিকে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা যায়:

বনভূমির ধরন
ক্রান্তীয়
চিরহরিৎ
ক্রান্তীয়
পতনশীল
স্রোতজ বন
(সুন্দরবন)
অশ্রেণিভুক্ত
বনভূমি

১. ক্রান্তীয় চিরহরিৎ বৃক্ষের বনভূমি

  • চিরহরিৎ: যে সকল উদ্ভিদের পাতা একসঙ্গে ঝরে পড়ে না এবং গাছগুলো চিরসবুজ থাকে তাদের চিরহরিৎ উদ্ভিদ বলে। এটি মূলত পাহাড়ি বনভূমি নামে পরিচিত।
  • অবস্থান: পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম, সিলেট অঞ্চলে অবস্থিত।
  • প্রধান বৃক্ষ: ময়না, তেলসুর, চাপালিশ, গর্জন, গামারি, জারুল, কড়ই, বাঁশ, বেত, হোগলা প্রভৃতি। আর প্রধান প্রাণী হাতি, শুয়োর ইত্যাদি।
  • ব্যবহার: গর্জন ও জারুলগাছ রেলের স্লিপার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। গামারি ও চাপালিশ গাছ সাম্পান ও নৌকা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। চন্দ্রঘোণা কাগজকলে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাঁশ ব্যবহৃত হয়।

২. ক্রান্তীয় পতনশীল বৃক্ষের বনভূমি

  • অবস্থান: যে সকল গাছের পাতা বছরে একবার সম্পূর্ণ ঝরে যায়, তাদের পাতাঝরা উদ্ভিদ বলে। ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, মধুপুর বনভূমি, গাজীপুর জেলার ভাওয়ালের উদ্যান, রংপুর ও দিনাজপুরের বরেন্দ্র বনভূমি অঞ্চল।
  • প্রধান উদ্ভিদ: ক্রান্তীয় পতনশীল বনভূমির প্রধান বৃক্ষগুলোর মধ্যে গজারি (বা শাল), ছাতিম, কুর্চি, বহেড়া, হিজল গাছ অন্যতম।
  • ব্যবহার: শালকাঠ ঘরের আসবাবপত্র, বৈদ্যুতিক তারের খুঁটি এবং জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

৩. স্রোতজ বনভূমি বা সুন্দরবন

  • অবস্থান: সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলায়। তবে ৯৫ বর্গকি.মি. পটুয়াখালী ও বরগুনায় অবস্থিত। ভৌগোলিকভাবে সুন্দরবন ৮৯° ও ৮.৫৫° পূর্ব দ্রাঘিমাংশ এবং ২১.৩০০ ও ২৩.২৩° উত্তর অক্ষাংশের মধ্যে।
  • আয়তন: সুন্দরবনের মোট আয়তন ১০,০০০ বর্গকি.মি.। বাংলাদেশ অংশে রয়েছে ৬,০১৭ বর্গকি.মি. বা ২,৪০০ বর্গ মাইল, যা মোট বনভূমির ৬২ শতাংশ, অবিশিষ্টাংশ রয়েছে ভারতে।
  • প্রধান উদ্ভিদ: সুন্দরী, গরান, গেওয়া, পশুর, ধুন্দল, কেওড়া, বায়েন, ছন, গোলপাতা প্রভৃতি। 'সুন্দরী' বৃক্ষের প্রাচুর্যের জন্য সুন্দরবন নামকরণ করা হয়েছে।
  • ব্যবহার:
    • সুন্দরী গাছ (৪০-৬০ ফুট দীর্ঘ) বড় বড় খুঁটি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
    • গেওয়া কাঠ বাক্স, দিয়াশলাইয়ের কাঠি ও নিউজপ্রিন্ট শিল্পে ব্যবহৃত হয়।
    • ধুন্দল কাঠ দিয়ে পেন্সিল তৈরি করা হয়।
    • গরান কাঠ দিয়ে রং প্রস্তুত করা হয়।
    • গোলপাতা দিয়ে ঘরের ছাউনি তৈরি করা হয়।
    • কুর্চি দিয়ে ছাতার বাট তৈরি করা হয়।
  • বাঘ গণনা: সুন্দরবনের বাঘ গণনায় ব্যবহৃত পদ্ধতি- পাগমার্ক (পদচিহ্ন) ও ক্যামেরা পদ্ধতি। পঁচাব্দী গাজী বাঘ শিকারের জন্য বিখ্যাত।

অন্যান্য তথ্য:

  • সুন্দরবনের অভয়ারণ্য: হিরণ পয়েন্ট, কাটকা ও আলকি দ্বীপ।
  • পূর্ব ও পশ্চিমে রয়েছে: বলেশ্বর ও রায়মঙ্গল নদী।
  • রয়েল বেঙ্গল টাইগার: সুন্দরবনের ফ্লাগশিপ প্রজাতি।
  • হরিণ: মায়া ও চিত্রা হরিণ দেখা যায়।
  • বাওয়ালী: সুন্দরবনের গোলপাতা সংগ্রহকারী।
  • মৌয়ালী: সুন্দরবনের মধু সংগ্রহকারী।

৪. অশ্রেণিভুক্ত সরকারি বনভূমি

এ বনভূমি মূলত মিশ্র প্রকৃতির। এসব ভূমির প্রধান গাছপালা বহু পূর্বেই চাষাবাদ, বসতি বা চোরাইভাবে কাটা হয়েছে। ফলে বর্তমানে বড় বৃক্ষ শূন্য। এ ধরনের ভূমিতে ব্যাপকভাবে ছনজাতীয় ঘাস হয়, যা এ অঞ্চলের অধিবাসীদের ঘরের ছাউনি প্রধান উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া, এসব সরকারি ভূমি স্থানীয় অধিবাসীগণ ঝুম চাষের জন্য ব্যবহার করে থাকে। এসব ভূমি বনবিভাগের পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন।

সামাজিক বনায়ন

স্থানীয় দরিদ্র জনগণকে উপকারভোগী হিসেবে সম্পৃক্ত করে পরিচালিত বনায়ন কার্যক্রম, যার প্রত্যক্ষ সুফলভোগীও উপকারভোগী হয়ে থাকেন। বনায়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা, বনজ সম্পদের নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা, লভ্যাংশ বণ্টন ও পুনঃবনায়ন সব কাজেই তারা ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকেন। ভূমিহীন, দরিদ্র, বিধবা ও দুর্দশাগ্রস্ত গ্রামীণ জনগণের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা নিশ্চিত করাই সামাজিক বনায়নের প্রধান লক্ষ্য।

সামাজিক বনায়নের মূল উদ্দেশ্য হলো দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে তাদের self dependent হতে সহায়তা করা এবং তাদের খাদ্য, পশুখাদ্য, জ্বালানি, আসবাবপত্র ও মূলধনের চাহিদা পূরণ করা। নার্সারি সৃজন, প্রান্তিক ও পতিত ভূমিতে বৃক্ষরোপণ করে বনজসম্পদ সৃষ্টি, মরুময়তারোধ, ক্ষয়িষ্ণু বনাঞ্চল রক্ষা ও উৎপাদন বৃদ্ধি, পরিবেশ উন্নয়ন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, নারীর ক্ষমতায়ন ও নেতৃত্ব সৃষ্টি এবং সর্বোপরি কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য নিরসনে সামাজিক বনায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশে সামাজিক বনায়নের কাজ শুরু হয় ১৯৮১ সালে (চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায়)। দেশের সামাজিক বনায়ন বিধিমালা ২০০৪ আরও কার্যকর ও যুগোপযোগী করে সামাজিক বনায়ন বিধিমালা ২০১০ প্রণয়ন করা হয়েছে।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান

মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান শুধু যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে অন্যন্য তা নয়, বরং দেশে যেটুকু বন এখনও অবশিষ্ট রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম। ১৯২৫ সালে বনায়ন করে সৃষ্ট বনরাজি এখন ঘন প্রাকৃতিক বনের আকার ধারণ করেছে। এর আয়তন ১২৫০ হেক্টর। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে দেখা মেলে নানা বিরল প্রজাতির পশু পাখির। সারা দুনিয়ার পাখি প্রেমিকরা দূরদূরান্ত হতে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পাখি দেখতে ছুটে আসেন। এ বনের মধ্যে এবং আশপাশে খাসিয়া ও টিপরা আদিবাসীরা বাস করেন।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভূপ্রকৃতি পাহাড়ি মৃত্তিকা গঠিত। উঁচু-নিচু টিলাজুড়ে এ বন বিস্তৃত। বনের মাটিতে বালুর পরিমাণ বেশি এবং প্রচুর পাথর দেখা যায়। বনের মাটিতে পাতা জমে জমে পুরু স্পঞ্জের মতো হয়ে থাকে, জায়গায় জায়গার মাটিই দেখা যায় না। এসব স্থানে জোঁকের উপদ্রপ খুব বেশি। বনের ভেতর দিয়ে অনেকগুলো পাহাড়ি ছড়া বয়ে চলেছে। এসব ছড়ার কয়েকটি ছাড়া বাকিগুলোতে শুধু বর্ষার সময়ই পানি থাকে। ছড়ার পানি পরিষ্কার টলটলে এবং ঠান্ডা।

জীববৈচিত্র্যের দিক থেকে লাউয়াছড়ার জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের সমৃদ্ধতম বনগুলোর একটি। আয়তনে ছোট হলেও এ বন দুর্লভ উদ্ভিদ এবং প্রাণীর এক জীবন্ত সংগ্রহশালা। বনে প্রবেশের সাথে সাথেই নানা ধরনের বন্যপ্রাণী, পাখি এবং কীটপতঙ্গের শব্দ শোনা যায়। বনের মধ্যে প্রায় সারাক্ষণই সাইরেনের মতো শব্দ হতে থাকে; প্রকৃতপক্ষে এটি এক ধরনের ঝিঁঝিঁ পোকা বা ক্রিকেটের শব্দ। লাউয়াছড়ার জাতীয় উদ্যানে ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভচর, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি এবং ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী দেখা যায়।

এ বনে স্তন্যপায়ী আছে নানা প্রজাতির। বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকের জন্য এ বন বিখ্যাত। বনের মধ্যে কিছু সময় কাটালেই উল্লুকের ডাকাডাকি কানে আসবে। উল্লুক ছাড়াও এখানে রয়েছে মুখপোড়া হনুমান, বানর, শিয়াল, মেছোবাঘ, বন্য কুকুর, এশীয় কালো ভাল্লুক, মায়া হরিণসহ নানা প্রজাতির জীবজন্তু। মায়া হরিণ সাধারণত উচ্চতায় ২০-২২ ইঞ্চি। এদের বাদামি রঙের দেহ, যা পিঠের দিকে ঘিয়ে গাঢ় রং ধারণ করে। এ বনে সরীসৃপ আছে নানা প্রজাতির। তার ভেতর অজগর হচ্ছে অনন্য। এখানে পাওয়া যায় হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপ।

উদ্যানের বন্য পাখির মধ্যে সবুজ ঘুঘু, বনমোরগ, তুর্কি বাজ, সাদা ভ্রু সাতভায়লা, ঈগল, হরিয়াল, কালোমাথা টিয়া, কালো ফর্কটেইল, ধূসর সাত শৈলী, প্যাঁচা, ফিঙে, লেজকাটা টিয়া, কালোবাজ, হীরামন, কালো-মাথা বুলবুল, ধুমকল প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। সাধারণ দর্শনীয় পাখির মধ্যে টিয়া, ছোট হরিয়াল, সবুজ সুইচোরা, তোতা, ছোট ফিঙ্গে, সবুজ কোকিল, পাঙ্গা, কেশরাজ প্রভৃতির দেখা মিলে। এছাড়া ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে সিতেশ রঞ্জন দেব তার চিড়িয়াখানা থেকে দুটি লক্ষ্মীপেঁচা ও একটি বনবিড়ালও অবমুক্ত করেন এ বনে।

রাতারগুল জলাবন

রাতারগুল জলাবন বা রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট বাংলাদেশের একমাত্র মিঠাপানির জলাবন বা সোয়াম্প ফরেস্ট এবং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, যা সিলেটের গোয়াইনঘাটে অবস্থিত। বনের আয়তন ৩,৩২৫.৬১ একর, আর এর মধ্যে ৫০৪ একর বনকে ১৯৭৩ সালে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সারা পৃথিবীতে স্বাদুপানির জলাবন আছে মাত্র ২২টি। ভারতীয় উপমহাদেশে আছে দুটি। একটি শ্রীলংকায়, আরেকটি বাংলাদেশের রাতারগুল। 

সুন্দর বিশাল এ বনের তুলনা চলে একমাত্র আমাজনের সঙ্গে। আমাজনের মতো এখানকার গাছ বছরে ৪ থেকে ৭ মাস পানির নিচে থাকে। এই বন মূলত প্রাকৃতিক বন হলেও পরবর্তীতে বাংলাদেশ বন বিভাগ, বেত, কদম, হিজল, মুর্তাসহ নানা জাতের জলসহিষ্ণু গাছ লাগিয়েছে। এছাড়া জলমগ্ন এই বনে রয়েছে হিজল, করচ আর বরুণ গাছ, আছে পিঠালি, অর্জুন, ছাতিম, গুটি জাম, আছে বট গাছও। এই বনে সাপের আবাস অনেক বেশি। এছাড়া রয়েছে বানর, গুঁইসাপ, সাদা বক, কানা বক, মাছরাঙা, টিয়া, বুলবুলি, পানকৌড়ি, চুপি, ঘুঘু, চিল এবং বাজপাখি।

Content Protection & Copyright

If you believe any content on our website infringes your rights, please contact us. We will review and take action promptly.

Post a Comment