কম্পিউটারের প্রজন্ম: প্রথম থেকে পঞ্চম প্রজন্মের বৈশিষ্ট্য ও ইতিহাস (পর্ব-৩)

কম্পিউটারের প্রথম (Vacuum Tube) থেকে পঞ্চম প্রজন্ম (Artificial Intelligence) পর্যন্ত প্রতিটি ধাপের সময়কাল, প্রসেসর, মেমোরি, প্রধান বৈশিষ্ট্য ও উদাহরণ

কম্পিউটারের প্রজন্ম (Generation): প্রথম থেকে পঞ্চম প্রজন্মের বৈশিষ্ট্য ও ইতিহাস

কম্পিউটারের যাত্রা শুরু গণনা যন্ত্র দিয়ে। সময়ের প্রয়োজনে ধাপে ধাপে বিকাশ লাভ করে কম্পিউটার বর্তমান পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। এই বিকাশের একেকটি ধাপকে একেকটিপ্রজন্ম (Generation)বলে। প্রযুক্তির পরিবর্তন এবং উন্নয়নের ভিত্তিতে কম্পিউটার প্রজন্মকে মোট পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়।

কম্পিউটারের প্রথম (Vacuum Tube) থেকে পঞ্চম প্রজন্ম (Artificial Intelligence) পর্যন্ত প্রতিটি ধাপের সময়কাল, প্রসেসর, মেমোরি, প্রধান বৈশিষ্ট্য ও উদাহরণ

কম্পিউটারের প্রতিটি প্রজন্মের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য, ব্যবহৃত প্রযুক্তি এবং উদাহরণ নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।

প্রথম প্রজন্ম (First Generation: ১৯৪৬-১৯৫৯)

কম্পিউটারের প্রথম প্রজন্ম হচ্ছে ভ্যাকুয়াম টিউব ব্যবহার করে তৈরি করা যন্ত্রগুলোর যুগ। এই যন্ত্রগুলোর নানা প্রকার দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতা ছিল, তবুও এই যন্ত্রগুলো পরবর্তী প্রজন্মের নতুন দিগন্তের ভিত্তি তৈরি করেছে।

প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো:

  • ভ্যাকুয়াম টিউবের ব্যবহার।[Image of ভ্যাকুয়াম টিউব]
  • পাঞ্চকার্ডের সাহায্যে ইনপুট-আউটপুট প্রদান।
  • চালনার সময় উচ্চ শব্দ হওয়া।
  • প্রচণ্ড উত্তাপ সৃষ্টি হওয়া।
  • প্রোগ্রাম রচনায় সংকেতের ব্যবহার করা।
  • চুম্বকীয় ড্রাম মেমোরি ব্যবহার করা।
  • আউটপুট ডিভাইস হিসেবে পাঞ্চকার্ড ব্যবহার করা।
  • মেশিন ভাষা ব্যবহার করা।

উদাহরণ:EDVAC, UNIVAC, EDSAC, EDBAC, MARK.

দ্বিতীয় প্রজন্ম (Second Generation: ১৯৫৯-১৯৬৫)

দ্বিতীয় কম্পিউটারগুলো প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের তুলনায় ছিল অনেক বেশি গতিসম্পন্ন, অনেক বেশি কাজের ক্ষমতাবিশিষ্ট এবং আকারে ছোট। দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের প্রধান পরিবর্তন ও অগ্রগতি হচ্ছে ভ্যাকুয়াম টিউবের পরিবর্তেট্রানজিস্টরের ব্যবহার

দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্যগুলো:

  • ট্রানজিস্টরের ব্যবহার।[Image of ট্রানজিস্টর]
  • ম্যাগনেটিক কোর মেমোরির ব্যবহার।
  • ফোরট্রান/কোবলইত্যাদি প্রোগ্রামিং ভাষার উদ্ভব, বিকাশ ও ব্যাপক ব্যবহার।
  • যন্ত্রপাতি ছোট হয়ে আসা।
  • কম উত্তপ্ত হওয়া।
  • কাজের গতি বৃদ্ধি।
  • আস্থা ও নির্ভরশীলতা অর্জন।

উদাহরণ:IBM-1400, IBM-1600, IBM-1401, IBM-1620, CDP-604.

তৃতীয় প্রজন্ম (Third Generation: ১৯৬৫-১৯৭১)

নতুন ধরনের সার্কিট উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের যাত্রা শুরু হয়। অনেকগুলো ট্রানজিস্টর এবং অন্যান্য উপকরণ মিলিয়েএকীভূত সার্কিট (Integrated Circuit)তৈরি করে ক্ষুদ্র সিলিকন পাতের ওপর স্থাপন করা হয়।

তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্যগুলো:

  • ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটের (IC) ব্যবহার।
  • সেমিকন্ডাক্টর মেমোরির ব্যবহার।
  • হাইলেভেল ল্যাংগুয়েজেরব্যবহার।
  • আউটপুটের জন্য ভিডিও ডিসপেন্স ইউনিট (VDU) এবং লাইন প্রিন্টারের ব্যবহার।
  • ইনপুট ডিভাইসের মাধ্যমেমাউসের ব্যবহার

উদাহরণ:IBM-360, IBM-370, PDP-8, PDO-11.

চতুর্থ প্রজন্ম (Fourth Generation: ১৯৭১-বর্তমান)

ক্ষুদ্রাকারের সিলিকন পাতের ওপর ইলেকট্রনিক উপকরণ স্থাপন করে সমন্বিত সার্কিট তৈরির মাধ্যমেমাইক্রোপ্রসেসরেরসৃষ্টি হয়। চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারের সাহায্যে বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম ব্যবহার করে আমাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনের প্রায় সব ধরনের কাজ করা যায়। চতুর্থ প্রজন্মের মাইক্রো কম্পিউটারই সাধারণ স্তরের মানুষের জন্য কম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছে।

চতুর্থ প্রজন্মের বৈশিষ্ট্যগুলো:

  • Very Large Scale Integration (VLSI) চিপের ব্যাপক ব্যবহারও অভাবনীয় উন্নয়ন ও বিকাশ।
  • মাইক্রোপ্রসেসর ও মাইক্রো কম্পিউটারের আবির্ভাব, বিকাশ ও বিশ্বময় প্রসার।
  • অতি ক্ষুদ্রাকৃতির বহনযোগ্য যন্ত্র নির্মাণের ব্যবস্থা।
  • নির্ভরযোগ্য, সম্প্রসারণযোগ্য, মাল্টিমিডিয়া, মাল্টিপ্রসেসিং সমন্বিত সেবা প্রদানকারী মাল্টিমিডিয়া সক্ষম অপারেটিং সিস্টেমের বিকাশ।
  • অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং প্যাকেট ও কাস্টমাইজ সফটওয়্যারের আনয়ন।
  • ডেটা স্টোরেজ ও সহযোগী যন্ত্রের পরিধির ব্যাপক সম্প্রসারণ।
  • বহুমুখী কাজে বহুমুখী Input/Output যন্ত্রের ব্যবহার।
  • মাল্টিপ্রসেসর সিস্টেমের আবির্ভাব।

উদাহরণ:IBM-PC, IBM-3033, HP-3000, Core-i3/i5/i7.

পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার (Fifth Generation: ভবিষ্যৎ/পরীক্ষামূলক)

পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার হবে কৃত্রিম বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করার ক্ষমতাসম্পন্ন। এজন্য কম্পিউটারেকৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence)সংযোজনের ওপর গবেষণা চলছে। পূর্ণ সাফল্য অর্জিত হওয়ার পর এই প্রজন্মের কম্পিউটারে কৃত্রিম বিচার-বুদ্ধি প্রয়োগ করা সম্ভব হবে বলে কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা আশাবাদী।

পঞ্চম প্রজন্মের বৈশিষ্ট্যগুলো:

  • উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন দ্রুতগতির হাজার হাজার মাইক্রোপ্রসেসরের ব্যবহার এবং অপটিক্যাল ফাইবারের ব্যবহার।
  • নতুন প্রজন্মের নতুন আকৃতির উচ্চ প্রসেসিং ক্ষমতার একাধিক কোরের মাইক্রোপ্রসেসরের ব্যবহার।
  • ন্যাচারাল ল্যাংগুয়েজ প্রোগ্রামিং।
  • কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোটিক প্রযুক্তির চরম বিকাশ।
  • কণ্ঠস্বর শনাক্তকরণ ও বিশ্বের সব ভাষায় কম্পিউটিং।
  • ডায়নামিক/ইন্টার‍্যাকটিভ মাল্টিমিডিয়াসহ সব ধরনের তথ্য পারাপার, প্রক্রিয়াকরণ ও ধারণ করার ব্যাপক ক্ষমতা অর্জন।

উদাহরণ:Fugaku, Summit, Sunway Taihulight, পরম ইত্যাদি।

একনজরে কম্পিউটার প্রজন্ম

পাঁচটি প্রজন্মের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো নিচের সারণীতে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:

প্রজন্মসময়কালপ্রসেসরমেমোরিইনপুট ডিভাইসউদাহরণ (কম্পিউটার)
প্রথম১৯৪৬-৫৯ডায়োড ও ট্রায়োড (ভ্যাকুয়াম টিউব)চুম্বকীয় ড্রামPanchcardUNIVAC
দ্বিতীয়১৯৫৯-৬৫ট্রানজিস্টরচুম্বকীয় কোরPanchcardIBM-1620
তৃতীয়১৯৬৫-৭১মাইক্রোপ্রসেসরঅর্ধপরিবাহীমাউসIBM-360
চতুর্থ১৯৭১-বর্তমানLSI/VLSIঅর্ধপরিবাহীমাউসCore-i3/i5, i7
পঞ্চমভবিষ্যৎ (পরীক্ষামূলক)SVLSIচুম্বকীয় বাবল মেমোরিকণ্ঠস্বর/ইঙ্গিতFugaku
Content Protection & Copyright

If you believe any content on our website infringes your rights, please contact us. We will review and take action promptly.

Post a Comment